ক্ষুদিরামকে পঞ্জাবি দেখানোয় বাঙালি অপমানে সরব মমতা

কলকাতা: ফের ভাষা সন্ত্রাস নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে অসম্মান করার অভিযোগ তুললেন তিনি। শুক্রবার এক্স (X)…

Mamata Banerjee NRC protest

কলকাতা: ফের ভাষা সন্ত্রাস নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে অসম্মান করার অভিযোগ তুললেন তিনি। শুক্রবার এক্স (X) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে ক্ষুদিরাম বসুকে ‘সিং’ নামে উল্লেখ করে তাঁকে পঞ্জাবের ছেলে হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা একেবারেই ভুল এবং বাঙালি বিপ্লবীদের প্রতি গভীর অপমান।

তিনি লেখেন— “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরব ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী… বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবসে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। একটা কথা লিখি, সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ‘সিং’ বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা? আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে দেখানো হয়েছে পঞ্জাবের ছেলে হিসেবে— অসহ্য!”*

   

মমতা জানান, ক্ষুদিরাম বসুর জন্মস্মৃতি বিজড়িত মহাবনী ও আশপাশের অঞ্চলকে উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার মহাবনী ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন করেছে। তাঁর সরকারের উদ্যোগে সেখানে শহীদ ক্ষুদিরামের মূর্তি স্থাপন, পাঠাগার সংস্কার, একটি সুবিশাল অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স রুম, মুক্তমঞ্চ, আধুনিক কটেজ নির্মাণ এবং ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদিরাম পার্কের পুনরুজ্জীবন করা হয়েছে। পুরো এলাকায় আলোকসজ্জাও করা হয়েছে। শুধু মেদিনীপুর নয়, কলকাতায়ও একটি মেট্রো স্টেশনের নাম ক্ষুদিরাম বসুর নামে রাখা হয়েছে— জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, “আমরা গর্বিত যে এই মহান বিপ্লবীকে সর্বদা শ্রদ্ধা জানিয়েছি। কিন্তু ভাষা-সন্ত্রাসীরা তাঁদের বিকৃত ইতিহাস চাপিয়ে দিয়ে দেশপ্রেমিকদের অসম্মান করছে। এটি আমরা মেনে নেব না।”

প্রসঙ্গত, এর আগে বহুবার বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে ‘বাঙালি-বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীও অতীতে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন যে, বাংলাভাষী মানুষদের বিভিন্ন রাজ্যে হেনস্থা করা হচ্ছে। শুক্রবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তিনি ফের আহ্বান জানান— “জাগ্রত হোক সেই দেশ, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভাষা— বাংলা ভাষা সম্মান, মর্যাদা ও সকল দেশবাসীর ভালবাসা পায়। বিকশিত হোক সেই দেশ, যেখানে ভাষা-সন্ত্রাস থাকবে না।”

Advertisements

রাজনৈতিক মহলের মতে, ক্ষুদিরাম বসুকে কেন্দ্র করে এই নতুন বিতর্ক ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যে একদিকে যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ উসকে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোরও রাজনৈতিক কৌশল স্পষ্ট।

বঙ্গ রাজনীতিতে ‘ভাষা সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গ নতুন নয়। এর আগেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন যে, হিন্দি আধিপত্য চাপিয়ে দিয়ে আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। বিশেষত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীদের পরিচয় বিকৃত করা হলে তা ইতিহাসের প্রতি অপমান বলে মনে করেন তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কঠোর মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে— ক্ষুদিরাম বিতর্ক ঘিরে রাজ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক লাভের সম্ভাবনা কতটা। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, বিপ্লবীদের সঠিক পরিচয় এবং অবদানকে যথাযথভাবে তুলে ধরা জাতীয় ঐক্য ও সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।