Mamata Banerjee: ‘গা বাঁচানো’র ক্ষোভেই মনীশ থেকে মন সরালেন মমতা?

রাজ্য রাজনীতির দুর্নীতির করিডরে ‘শিক্ষা দুর্নীতি’ গত কয়েক বছর ধরেই শিরোনামে রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চার্জশিটে একাধিক শিক্ষা সচিব, পর্ষদ সভাপতি থেকে শুরু…

Mamata Banerjee reshuffle 9 IAS officer in different posts including the principal secretary of education department, 'গা বাঁচানো'র ক্ষোভেই মনীশ থেকে মন সরালেন মমতা?

রাজ্য রাজনীতির দুর্নীতির করিডরে ‘শিক্ষা দুর্নীতি’ গত কয়েক বছর ধরেই শিরোনামে রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চার্জশিটে একাধিক শিক্ষা সচিব, পর্ষদ সভাপতি থেকে শুরু করে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাম অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করা হয়েছে। খোদ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দী রয়েছেন।

এমনকী কলকাতা হাইকোর্টে শিক্ষায় দুর্নীতির জটিল জালকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটবৃক্ষের সাথেও তুলনা করা হয়েছে। এবার সেই আবহেই দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব হিসাবে থাকা আমলা মনীশ জৈনকে বদলি করল নবান্ন।

   

শিক্ষাদুর্নীতিতে মূল অভিযুক্ত পার্থ চ্যাটার্জির আমল থেকেই শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবের দায়িত্বে ছিলেন মনীশ। এতদিন ধরে এত অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও দপ্তরের সচিব বদল হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মমতার ক্ষোভের মুখে পড়েন এই উচ্চপদস্থ আধিকারিক।

“দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা”র অভিযোগ এনেছেন মমতা মনীশের বিরুদ্ধে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এর পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। মমতার দুই নৌকা তত্ত্ব আসলে মনীশের দায়িত্ব নিতে অনীহাকেই ইঙ্গিত করছে বলে দাবি তাঁদের। নবান্ন সূত্রে দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক মাস ধরে মনীশের কার্য পদ্ধতিতে বড়সড় বদল লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের উপরে তিনি লিখে দিচ্ছিলেন ‘হায়ার অথরিটির অর্ডারে পাস হচ্ছে এই ফাইল’। শোনা যাচ্ছে এই কথা জানতে পেরেই মেজাজ গরম হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর।

অগস্টে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের দারুন মজা, টানা দু’দফায় লম্বা ছুটির স্বাদ

শিক্ষায় দুর্নীতির তদন্তে বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাক পেয়েছেন মনীশ। বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী মহলের মতে যেটা কিনা খুব স্বাভাবিকই ছিল। অসমর্থিত সূত্রে খবর, সেই সময়ও মনীশ সমস্ত দায়ই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপিয়েছিলেন। যা নিয়ে সে সময় নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন মমতা। কিন্তু এবার ফাইলের উপরে লিখে দেওয়া বার্তা তে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল মুখ্যমন্ত্রীর।

এমনিতেই নিয়োগ সংক্রান্ত ওএমআর শিট কেলেঙ্কারি নিয়ে জেরবার রাজ্য সরকার। প্রাথমিক নিয়োগ নিয়ে ওএমআর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা। ২০১৪ সালের এসএসসির প্রায় ২৭ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও বজায় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে যে মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে পুজোর পরে। এরকম অবস্থায় খোদ সচিবের এইভাবে দায় না নেওয়ার মনোভাবে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীদের জন্য সুখবর, হেলথ স্কিম নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নবান্নের

আর তারপরই এল এই বদলির নির্দেশ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আপাতত মনীশকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্বে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে বিনোদ কুমারকে। যিনি এর আগে রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব ছিলেন। রাজ্যের শিক্ষক মহলের মতে শিক্ষায় নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার সমাধান হওয়া দ্রুত প্রয়োজন। তা না হলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।

হাইকোর্টে ২৭ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীর এক লপ্তে চাকরি বাতিল নিয়ে কেঁপে গিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষাকাঠামো। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের তীব্র আকালের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে শিক্ষা দপ্তর তখন কলেজগুলি থেকে আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের নিয়ে আসার নিদানও দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের কল্যাণে সেই সমস্যা আপাতত ধামাচাপা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা আবার মাথাচাড়া দিতে কতক্ষণ?

মনীশের পাশাপাশি আরও ৯জন আমলাকে অদল বদল করা হয়েছে তাঁদের পদে। তবে গুরুত্বের বিচারে মনীশের এই পদ বদল রাজনৈতিক মহলেরও নজর টেনেছে। নতুন দায়িত্বে আসা বিনয় কুমারকে শিক্ষা দপ্তরের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা দপ্তর এবং ডিস্ট্রিক্ট গেজিটিয়ারের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এবার দেখা দরকার এই রদবদলে শিক্ষা দপ্তরের এতদিনের চেনা ছবির কোনও বদল হয় কিনা।