বাংলায় ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না, জানালেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বুধবার এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন যে সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না। কলকাতায় জৈন সম্প্রদায়ের…

Mamata Banerjee Rejects Implementation of Amended Waqf Law in West Bengal

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বুধবার এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন যে সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না। কলকাতায় জৈন সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি আপনারা ক্ষুব্ধ, কিন্তু বাংলায় কাউকে বিভাজন ও শাসনের সুযোগ দেওয়া হবে না। আপনারা বিশ্বাস রাখুন, এখানে এমন কিছু হবে না যাতে সংখ্যালঘুদের ক্ষতি হয়।”

মুখ্যমন্ত্রী আইনটির সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, “বাংলাদেশে যা পরিস্থিতি, তাতে এখন এই বিল পাস হওয়া উচিত ছিল না। এটা একেবারে সময়োপযোগী নয়।”

উল্লেখ্য, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সম্প্রতি লোকসভা ও রাজ্যসভা উভয়েই পাস হয়। এপ্রিল ৫ তারিখে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই বিলে সম্মতি দেওয়ার পর এটি আইনে পরিণত হয়। তবে রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এটি পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর করা হবে না।

মুর্শিদাবাদে সহিংসতা: প্রতিবাদ গড়াল হিংসায়

ওয়াকফ আইন নিয়ে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলায় এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল সহিংসতায় পরিণত হয়। প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে, চলে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি পুলিশ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর থেকেই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে গুজব না ছড়ায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

বিরোধীদের কড়া আক্রমণ

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেন, সেটি মুর্শিদাবাদের সহিংসতার দৃশ্য। তিনি বলেন, “এই প্রতিবাদ নয়, এটা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। দুষ্কৃতিরা রাস্তায় নেমে সরকারি সম্পত্তি পুড়িয়ে দিচ্ছে। রাজ্য প্রশাসন চোখ বুজে রয়েছে, শুধুমাত্র ভোট ব্যাংক রক্ষার জন্য।”

তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানান, মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক, কারণ স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।

বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্যও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, “অন্য রাজ্যে সামান্য হিংসার ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকীয়ভাবে প্রতিবাদ করেন। অথচ নিজের রাজ্যে ভোট ব্যাংক জ্বলছে, তখন তিনি চুপ থাকেন। ইন্টারনেট বন্ধ করে সত্য গোপন করতে চান।”

Advertisements

রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ

ওয়াকফ আইন সংশোধনের ফলে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, এই আইনের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, এই আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা হচ্ছে, এবং এটি ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়।

তবে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট—মুসলিম, জৈন, শিখ কিংবা অন্য কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বা সম্পত্তিগত অধিকার ক্ষুন্ন হতে দেওয়া হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা একসাথে সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে চলে, আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না।”

ওয়াকফ আইন ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজ্য সরকার যেখানে আইন কার্যকর করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রের তরফে চাপ আসতে পারে, যা সংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের সহিংসতা ও রাজ্যের অবস্থান ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এই ঘটনাকে ভোট ব্যাংক রক্ষার কৌশল হিসেবে দেখছে, আর শাসক দল বলছে, এটি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার লড়াই।