পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান এবং আগামী নির্বাচনে তাদের শক্তি বৃদ্ধির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক কঠিন সময় আসছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কৌশলগতভাবে নিজেদের শক্তি পুনর্গঠন এবং সংগঠনকে মজবুত করার দিকে মনোযোগী।
বৃহস্পতিবার, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসমাবেশের পর, মমতা ভবানীপুরে তার নিজস্ব বিধানসভা কেন্দ্রের আট কাউন্সিলরের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকটি তৃণমূলের আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা এবং বিজেপির বাড়ন্ত ভোটের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মহাসমাবেশ শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোজা চলে যান ভবানীপুর, যেখানে তিনি সেখানে থাকা আট কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ বক্সী, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম বসু, দেবলীনা বিশ্বাস, কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে মমতা প্রধানত ভবানীপুরের উন্নয়ন পরিস্থিতি, পুরসভা এলাকায় চলমান প্রকল্পগুলির সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছেছে কিনা, এবং ভোটার তালিকা নিয়ে রাজ্যজুড়ে চলা গোলযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষত, ভোটার তালিকার স্ক্রুটিনির বিষয়ে তিনি কাউন্সিলরদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূল সুপ্রিমো ভবানীপুরের উন্নয়ন বিষয়ে সরাসরি খোঁজখবর নিয়ে বলেন, ‘‘এখন আমাদের জন্য প্রত্যেকটি ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, আগামী নির্বাচনে লক্ষ্য হচ্ছে ২১৫ আসন, যা কোনভাবেই নেমে আসা যাবে না।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রের কিছু পুর এলাকায় বিজেপি বিপুল ভোটের মার্জিন পেয়েছিল। বিজেপি পাঁচটি পুর এলাকায় এগিয়ে ছিল, যখন তৃণমূল মাত্র তিনটি এলাকায় জয়ী হয়েছিল। এই পরিসংখ্যান তৃণমূলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, ভবানীপুরে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি এবং তৃণমূলের ভোট ব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেই কারণে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি এই বিশেষ বৈঠকটি আয়োজন করেছেন যাতে ভবানীপুরে বিজেপির ভোট বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করা যায় এবং তৃণমূলের সংগঠন আরও শক্তিশালী করা যায়।
তৃণমূল গত বছর থেকেই কলকাতা পুরসভা এলাকায় সংগঠনকে মজবুত করতে কাজ শুরু করেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছিল, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৭টি ওয়ার্ডে শাসক দল পিছিয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের নেতা ববি হাকিম একাধিক বৈঠক করেছেন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
এছাড়া, রাজ্যে আরজি করের মতো সমস্যাগুলো, যা কলকাতাকে উত্তপ্ত করেছিল, সেই সব অস্বস্তি কাটিয়ে তৃণমূল নতুন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, মমতা ভালোই বুঝতে পারছেন যে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারলে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে।
তৃণমূল কংগ্রেস এখন বিভিন্ন পন্থায় তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাইছে, যাতে বিজেপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদের শক্তি বজায় রাখতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, আগামী নির্বাচনে ২১৫ আসন ধরে রাখা সম্ভব হলে তৃণমূলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শক্তিশালী হবে।