Mamata Banerjee: ২৪-এর পুজোয় থিম নিয়ে দুশ্চিন্তায় মমতা! বন্ধ হবে রানাঘাটের ‘বড় দুর্গা’?

কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনই বঙ্গে বেজে গেল পুজোর বাদ্য (Mamata Banerjee) । বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) করলেন বৈঠক। কিন্তু সেই বৈঠকে…

কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনই বঙ্গে বেজে গেল পুজোর বাদ্য (Mamata Banerjee) । বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) করলেন বৈঠক। কিন্তু সেই বৈঠকে একদিকে যেমন ৮৫ হাজারের অনুদানের স্বস্তি আছে, তেমনই আছে থিম নিয়ে মমতার (Mamata Banerjee) দুশ্চিন্তার কাঁটা। শ্রীভূমি থেকে রানাঘাট এই মুহূর্তে আশঙ্কা এবং সংশয়ের মেঘ সর্বত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রাউড মানেজমেন্ট নিয়ে প্রবল কড়াকড়ির চোটে বন্ধ হতে পারে রানাঘাটের বড় দুর্গা? সেই সম্ভাবনাও ওড়ানো যাচ্ছে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, তিনি এ বছর একটু আগেই এই মিটিং ডেকেছেন। প্রতিবছর এই মিটিং হয় ঠিকই তবে সেটা আরেকটু পরের দিকে। কারণ হিসেবে মমতা দাবি করেছেন, যাতে পুলিশ প্রশাসন এবং পুজো কমিটিগুলির মধ্যে সমন্বয়ের জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যায়, তাই জন্যই তাড়াতাড়ি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। আর সেই বৈঠকেই ফিরে এল কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের সব থেকে বড় দুর্গা প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দেওয়ার স্মৃতি।

   

থিম পুজো নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন নামী পূজো কমিটিগুলির মধ্যে রেষারেষি সারা বছরই চলে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনো ক্লাবই তাদের থিমের গোপন রহস্য প্রকাশ করতে চায় না। এই কথাকে সমর্থন করেও মমতার নির্দেশ, অন্তত পুলিশ প্রশাসনকে থিমের ব্যাপারে জানানো হোক এবং আলোচনা করা হোক। মমতার দাবি হঠাৎ করে কোথাও যদি প্রচন্ড ভিড় হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে পুলিশের পুজো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটাই ভেঙে পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতি এড়াবার জন্য আগেভাগেই আলোচনা করে নেওয়া উচিত। সেই প্রসঙ্গেই মমতার বক্তব্য যে তিনি সংবাদপত্র থেকে জেনেছেন একশো ফুটেরও বেশি বড় একটি দুর্গা হচ্ছে। মমতার প্রশ্ন, এই চমক দেখতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ যখন এক জায়গায় জড়ো হবেন তখন কি করে সামাল দেওয়া হবে তার কোন প্ল্যানিং হচ্ছে কি? মমতার এই কথাতেই দেশপ্রিয় পার্কের সেই পুজো বন্ধ করে দেওয়ার স্মৃতি ফিরে আসে উদ্যোক্তাদের মনে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে রানাঘাটে ১২৫ ফুটের বিশালাকায় দুর্গা প্রতিমার কথা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদপত্র সর্বত্রই এখন শিরোনামে।

সাম্প্রতিক অতীতে শুধু দেশপ্রিয় পার্ক নয়, ২০২১ সালে কলকাতার বিখ্যাত শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো দর্শনও বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। বুর্জ খলিফার আদলে তৈরি প্যান্ডেল দেখতে, রীতিমত জনসমুদ্র আছড়ে পড়েছিল শ্রীভূমির স্বল্প পরিসরের রাস্তায়। যার ফলে এয়ারপোর্টগামী ভিআইপি রোডও স্তব্ধ হয়ে যায়। স্মৃতি মনে এই পূজার উদ্যোক্তা তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকেও হুশিয়ারি দিয়েছেন মমতা।

এর আগে সাম্প্রতিক অতীতে, ২০২২ সালে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজোয় লালকেল্লার আদলে তৈরি মণ্ডপে লেজার শো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রবল ভিড়ের চাপে কলকাতা পুলিশ সেই নির্দেশ দেয়। পরে অবশ্য এই পুজো তার নিজের মতই চলেছিল। ২০২২ সালেই কল্যাণীতে টুইন টাওয়ারের প্রবল ভীড় সামলাতে লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশ এবং উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেও।

পুজোর সময় ভি আই পি মুভমেন্ট এবং ভিআইপি কার্ড নিয়ম মমতা এ দিন মুখ খুলেছেন। পুজোর সময় ভিআইপি কার্ড এবং এন্ট্রি তিনি পছন্দ করেন না, স্পষ্ট জানিয়েছেন মমতা। তিনি পঞ্চমীর মধ্যেই সমস্ত পুজো উদ্বোধন করে নিজের কাজ সেরে ফেলেন তার কারণই হল তাঁর জন্য যাতে জনগণের অসুবিধা না হয়। মমতার বক্তব্য রাজ্যের মন্ত্রী এবং ভিভিআইপিদের এই বিষয়ে একটু সতর্ক হওয়া দরকার। পুজোতে জনসাধারণের প্রতিমা দর্শন এবং উৎসব উদযাপনে যাতে অসুবিধা না হয়, সেই দিকটা ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের নজর রাখতে হবে।

সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি পুজো প্যান্ডেলে অন্তত তিন থেকে চারটি এন্ট্রান্স এবং এক্সিট পয়েন্ট রাখার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। মমতার কড়া হুশিয়ারি, কোন পূজো যদি নিয়ম না মানে এবং তার ফলে যদি কোনও বিপর্যয় হয়, তাহলে সরাসরি ব্ল্যাকলিস্টেড করা হবে সেই পুজো কমিটিকে। মমতার বক্তব্য, যে এর ফলে আগামী দিনে ওই পুজো কমিটি যেমন অনুদানও পাবে না, তেমনই পুজো করতে দেওয়ার পারমিশন নিয়েও ভাবনা চিন্তা করবে প্রশাসন।

খাতায়-কলমে যদিও এখন বর্ষার মরশুম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে কার্যত এখন থেকেই পুজোর মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনে। অনুদান বেড়ে এই বছর হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক চরমে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী রাজ্যের প্রায় ৪২ হাজার পুজো কমিটি এই অনুদান পাচ্ছে। মহিলা পরিচালিত প্রায় ২৫০০ এর কাছাকাছি পূজো কমিটি রয়েছে।

সবমিলিয়ে আশ্বিনের অকাল বোধনকে এবছর আরও জমজমাট করতে চাইছেন মমতা। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পাওয়া বাঙালির দুর্গোৎসবকে সফল এবং নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর মমতা প্রশাসন। আর তাই নিরাপত্তার কড়াকড়িতে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ একাধিক পূজা কমিটির কপালে। যেখানে মমতা নিজের মন্ত্রীকেই ছাড় দিচ্ছেন না, সেখানে তাদের অবস্থা কি হতে পারে? সেটা ভেবেই এখন কলকাতা এবং জেলার হেভিওয়েট পুজো কমিটিগুলির অনেকেই নতুন করে প্ল্যানিং শুরু করতে চাইছে।