২১ জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেস যখন রাজ্যজুড়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে, তখন পাল্টা রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘোষণা করল বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘কন্যা সুরক্ষা’ কর্মসূচির অন্তর্গত উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কর্মসূচিকে মোটেই গুরুত্ব দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওটা (বিজেপির কর্মসূচি) কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। ওদের নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। শহিদদের সম্মানে আমাদের কর্মসূচি সফল করাই মূল লক্ষ্য।” এভাবেই বিজেপির ২১ জুলাইয়ের পাল্টা পদক্ষেপকে কার্যত অগ্রাহ্য করলেন তৃণমূল নেত্রী।
প্রতি বছর ২১ জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দিনটির সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে দলটির রাজনৈতিক ইতিহাস। ১৯৯৩ সালের পুলিশের গুলিতে নিহত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের স্মরণেই এই দিনটি পালন করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই দিনটিকে ঘিরে বিশাল কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ২১ জুলাই শহিদ দিবসে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কলকাতায় আসা তৃণমূল কর্মীদের নিরাপত্তা, যাতায়াত এবং আবাসনের বিষয়ে কোনও খামতি রাখা যাবে না। পুলিশ এবং প্রশাসনকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। সমস্ত খুঁটিনাটি দিক খতিয়ে দেখে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর হেনস্থা। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য যদি কাউকে আক্রমণ করা হয়, তাহলে তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এবার আর চুপ করে থাকা চলবে না, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দেড় কোটি ভিনরাজ্যবাসী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। অথচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রায় ২২ লক্ষ বাঙালি কর্মী ও শ্রমিক নানা ভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত কখনওই বরদাস্ত করা হবে না—এমন বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু প্রশাসনিক স্তরেই নয়, সমাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও এই ইস্যুতে বড় মাপের প্রচার অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার বার্তা পৌঁছে দিতে রাজ্যজুড়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সবমিলিয়ে, শহিদ দিবসের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়লেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা স্পষ্ট—বিজেপির পাল্টা কর্মসূচিকে গুরুত্ব না দিয়ে শহিদদের সম্মান জানানোই তৃণমূলের প্রধান অগ্রাধিকার। বিজেপির ‘কন্যা সুরক্ষা’ কর্মসূচি এবং উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক আলোড়নের মাঝেও, তৃণমূল কংগ্রেস শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে রাজ্যের সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত করতে চায়।
এই পরিস্থিতিতে ২১ জুলাই রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।