২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন, যা ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র চর্চা। মঞ্চ থেকে তিনি বললেন, “যেমন জগন্নাথধাম দিঘায় তৈরি করেছি, তেমনই বাংলায় আগামী দিনে দুর্গাঙ্গন করে দেব।” এই বক্তব্যকে শুধু একটি মন্দির নির্মাণের ঘোষণা বলেই দেখছেন না অনেকে, বরং এটি রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আবেগকে জাগিয়ে তোলার কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জগন্নাথধাম থেকে দুর্গাঙ্গন – বাংলায় মমতার হিন্দু আবেগের বার্তা?
পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রতটবর্তী জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। সেই মন্দির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এটা আমাদের গর্বের জায়গা। ওড়িশার জগন্নাথধাম যেমন, আমরাও বাংলায় এই ঐতিহ্য বজায় রাখব।” আর এবার শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তারই ধারাবাহিকতায় দুর্গা মন্দির বা ‘দুর্গাঙ্গন’-এর ঘোষণা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল।
এই দুর্গাঙ্গন ঠিক কোথায় হবে, কবে শুরু হবে নির্মাণ—তা এখনও জানাননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে একুশের সভার মতো আবেগময় ও প্রতিকী মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা আসার অর্থ যে গভীর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্গাপুজো বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ভিত্তি, যার মধ্যে রয়েছে উৎসব, ভক্তি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকে এক অনির্বচনীয় উন্মাদনা। আর তাই, একটি ‘দুর্গাঙ্গন’ নির্মাণের ঘোষণা আসলে সেই আবেগকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার প্রস্তাব।
ধর্ম নিয়ে বিজেপির প্রচারকে পাল্টা?
রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র হয়েছে। বিজেপি বারবার তৃণমূলকে ‘তুষ্টিকরণ’-এর অভিযোগে আক্রমণ করেছে। কখনও বলা হয়েছে, তৃণমূল হিন্দুদের অবহেলা করছে, সংখ্যালঘু appeasement করছে। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দিঘার জগন্নাথধাম হোক কিংবা ভবিষ্যতের দুর্গাঙ্গন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ রাজনীতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশেষ করে আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় আবেগে টান দিতে এই ধরনের ঘোষণা তৃণমূলের একটি কৌশলগত চাল হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। আবার অনেকে বলছেন, এই পদক্ষেপ তৃণমূলের সেই বার্তা বহন করে যে, তারা ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রেখেই হিন্দু আবেগকেও সমানভাবে মর্যাদা দিতে চায়।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
মমতার এই ঘোষণার পরই বিরোধীরা কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। বিজেপির একাধিক নেতা বলেছেন, “ভোটের মুখে হঠাৎ মমতার ধর্মের টান বেড়ে গিয়েছে!” কেউ কেউ বলছেন, “যিনি আগে বলতেন ধর্ম ব্যক্তিগত, তিনি এখন রাম-জগন্নাথ-দুর্গা নিয়ে মাঠে নেমেছেন!”
তবে তৃণমূলের পালটা দাবি, “বাংলার সংস্কৃতি, ধর্ম, উৎসব সবই আমাদের গর্ব। আমরা বাংলার ঐতিহ্যকে মর্যাদা দিচ্ছি। ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি নয়, সব ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানোই আমাদের নীতি।”