কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ফের একবার গর্বের সঙ্গে বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরলেন ‘কন্যাশ্রী দিবসে’। বৃহস্পতিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামের মঞ্চ থেকে তিনি জানান, বিশ্বের ৬২টি দেশের ৫৫২টি প্রকল্পের মধ্যে কন্যাশ্রী প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এই সম্মান শুধু বাংলার জন্য নয়, বিশ্বের মঞ্চে বাংলার নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবেও স্বীকৃত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কন্যাশ্রী আমাদের গর্ব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা শুধু আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি না, মেয়েদের শিক্ষার পথও খুলে দিচ্ছি।”
২০১৩ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অল্পবয়সে বিয়ে রোধ করে মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া। শুরুতে হয়তো কেউ ভাবেনি এই প্রকল্প এত দূর পৌঁছবে, কিন্তু আজ তা শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানান, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯৩ লক্ষ মেয়ে কন্যাশ্রীর সুবিধা পেয়েছে। শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, কন্যাশ্রী মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, সমাজে নিজের পরিচয় গড়ে তোলার পথ দেখিয়েছে।
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী(Mamata Banerjee) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও শোনান। নিজের কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা তিনি খোলাখুলি ভাগ করে নেন উপস্থিত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। মমতা বলেন, “আমি যখন কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছিলাম, তখনও নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম, অনেক মেয়ে শুধুমাত্র আর্থিক কারণে বা সামাজিক চাপে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। তাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এমন একটি প্রকল্প করব যাতে মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়।”
কন্যাশ্রী প্রকল্পে দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে— কন্যাশ্রী বার্ষিকী (K1) এবং কন্যাশ্রী স্নাতক (K2)। স্কুলে পড়া অবস্থায় প্রতি বছর মেয়েরা আর্থিক সহায়তা পায় এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হলে এককালীন বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। এর ফলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী, কন্যাশ্রী প্রকল্প চালুর পর থেকে স্কুলছুট মেয়েদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অনেকটাই কমেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি মেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। শিক্ষা হল সবচেয়ে বড় শক্তি। কন্যাশ্রী সেই শক্তির হাতিয়ার।” তিনি আরও জানান, আজ অনেক কন্যাশ্রী গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি করছে, কেউ কেউ সরকারি চাকরিতেও যোগ দিয়েছে। অনেকে আবার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী(Mamata Banerjee) মঞ্চ থেকে মেয়েদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা শুধু ডিগ্রি অর্জন করো না, সমাজে নিজের পরিচিতি তৈরি করো। কেউ যদি বাধা দেয়, তাকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করো। মনে রেখো, তুমি দুর্বল নও, তুমি শক্তিশালী।”
কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কর্তারা, বহু স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং হাজার হাজার ছাত্রী। অনুষ্ঠান শেষে কয়েকজন সফল কন্যাশ্রীকে মঞ্চে ডেকে সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাদের সাফল্যের গল্প শুনে করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা অডিটোরিয়াম।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “কন্যাশ্রীর সঙ্গে আমরা এখন ‘রূপশ্রী’ ও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পও যুক্ত করেছি, যাতে মেয়েদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি হয়।”
ধনধান্য স্টেডিয়ামের এই কন্যাশ্রী দিবস তাই শুধু একটি উদযাপন নয়, বরং বাংলার মেয়েদের জন্য আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়নের এক নতুন প্রেরণা হয়ে রইল। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন— শিক্ষা, আত্মনির্ভরতা ও সমতার লড়াইয়ে কন্যাশ্রী থাকবে বাংলার গর্বের মুকুটে চিরস্থায়ী রত্ন হয়ে।