‘নাগরিক দায়িত্ব ভুলে গেলে চলবে না’: জলমগ্ন কলকাতা নিয়ে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: টানা কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কলকাতা। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাটে জল জমে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। সকাল…

families-of-electrocution-victims-to-get-2-lakh-and-jobs-says-mamata-banerjee

কলকাতা: টানা কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কলকাতা। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাটে জল জমে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। সকাল থেকে জলজট, যানজট এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের চিত্রে শহরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এবং নাগরিক সচেতনতার আহ্বান জানালেন।

নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব ঠিকই, কিন্তু সেটি সঠিকভাবে কার্যকর রাখতে নাগরিকদেরও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই নালার মুখে আবর্জনা ফেলে রাখেন। এতে জল নামতে বাধা সৃষ্টি হয়। আমাদের নাগরিক সচেতনতা হারিয়ে ফেললে এই সমস্যার সমাধান হবে না।”

   

তিনি আরও বলেন, “সল্টলেক এলাকায় মেট্রোর কাজের জন্য প্রচুর নির্মাণ সামগ্রী ও মাটি পড়ে রয়েছে। সেগুলোও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বাধা দিচ্ছে। পূজোর আগে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।”

প্রবল বৃষ্টিতে জলজটের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জলসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলেন। যদিও সংস্থাটি সমস্ত দায় অস্বীকার করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করছি। কিন্তু কেউ কেউ ৫ লক্ষ টাকা দাবি করছেন। তাঁদেরও বুঝতে হবে নাগরিক হিসেবে কিছু দায়িত্ব তাঁদেরও রয়েছে। শুধু সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে দিলে চলবে না।”

এছাড়াও তিনি গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন নবান্নে যাওয়ার সময় গঙ্গার জল দেখি। সম্প্রতি জলস্তর অনেকটা বেড়েছে। পরে শুনলাম, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকেও জল নেমে আসছে। যদি ডিভিসি আগেভাগে এসব তথ্য দেয়, তাহলে আমরা আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারি।”

Advertisements

শহরের জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কলকাতার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনও ব্রিটিশ আমলের। গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও নির্মাণ বৃদ্ধি পেলেও পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে নাগরিকদের অসচেতনতা এবং আবর্জনা ফেলার অভ্যাস সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বুধবার সকাল থেকেই শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রাস্তায় কোমর পর্যন্ত জল জমে পড়েছে। বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, সল্টলেক, পার্ক সার্কাস, গড়িয়াহাট-সহ বহু এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ। বিমান ও রেল পরিষেবাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, “শুধু সরকারকে দোষারোপ না করে নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাস্তা ও নালাকে পরিষ্কার রাখা, আবর্জনা না ফেলা এবং নিজের আশপাশে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাই জলজট কমানোর প্রথম ধাপ।”

দুর্গাপূজার আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা স্পষ্ট — নাগরিক ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগেই কলকাতাকে জলযন্ত্রণা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News