কলকাতা: ভোটের আগে ফের কড়া পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বিশেষভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাসকে (Arup and Firhad)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে যে কোনও ধরনের তথ্য চুরি বা গোপন সমীক্ষা রাজ্যে রাজনৈতিক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে—এই আশঙ্কাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া সতর্কবার্তা দিতে দেখা গেল।
মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, সমীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কিছু সংগঠন বা রাজনৈতিক দল গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে। এই তথ্য পরে নির্বাচনের সময় বা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মতো প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হতে পারে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রক্রিয়ার ওপর কড়া নজরদারির নির্দেশ দেন।
শহরের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন—সমস্ত পুরসভা গুলি যেন এই ব্যাপারে সজাগ থাকে। পুর এলাকার মধ্যে কোনও ধরনের সমীক্ষা বা সন্দেহজনক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার নজরে আনতে হবে। এক্ষেত্রে পুর প্রশাসনকে সরাসরি দায়িত্ব দিয়েছেন ফিরহাদকে। মূলত কলকাতা ও আশেপাশের শহুরে এলাকায় এই সতর্কতাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, তৃণমূলের আরেক হেভিওয়েট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সমস্ত বিধায়কদের সতর্ক করার। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন, বাড়িতে বাড়িতে কোনও ধরনের সমীক্ষা চালানো হলে বিধায়করা যেন তা অবিলম্বে খোঁজ নেন এবং পদক্ষেপ করেন। অর্থাৎ গ্রামীণ ও শহুরে—দুই স্তরেই তৃণমূল বিধায়করা যাতে সক্রিয় থাকেন তার দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসের কাঁধে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন—“ভোটের আগে যে কোনও ধরনের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য যেন কোনওভাবেই চুরি না হয়।” তিনি আরও জানান, এই সমীক্ষা প্রক্রিয়ার নামে কিছু সংস্থা রাজ্যের নাগরিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। সেই কারণেই পুরসভা ও বিধায়কদের একযোগে সক্রিয় থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কৌশল তৃণমূল নেত্রীর একেবারে মাস্টারস্ট্রোক। বিজেপি বারবার রাজ্যে এনআরসি ও ভোটার তালিকার কারচুপির অভিযোগ তুলছে। ঠিক সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে বিরোধীদের কৌশলকেই ভেস্তে দিতে চাইছেন। আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতেও এই পদক্ষেপ কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একদিকে তৃণমূল নেত্রী যেমন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন, অন্যদিকে রাজ্যের প্রতিটি স্তরে সংগঠনকে মজবুত করতে চাইছেন। ফিরহাদ ও অরূপকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া তারই অঙ্গ। তৃণমূল সূত্রে খবর, আসন্ন দিনে এই দুই মন্ত্রী সরাসরি দলীয় সংগঠন ও প্রশাসনিক স্তরে সমন্বয়ের কাজ করবেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, লোকসভা ভোটের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রমাণ করলেন, তিনি কেবল জনসংযোগে নয়, কৌশলগত দিক থেকেও নিজের দলকে এগিয়ে রাখতে সর্বদা প্রস্তুত। অরূপ ও ফিরহাদকে গুরু দায়িত্ব দিয়ে তৃণমূল নেত্রী দেখিয়ে দিলেন—ভোটের আগে তাঁর নজর সর্বত্র, কোনও সুযোগ বিরোধীরা পাবে না।