কলকাতা: ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশে রাজ্যজুড়ে নতুন রাজনৈতিক রূপরেখা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee protest)। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিলেন তিনি। মূল ইস্যু—বাংলা ভাষার উপর ‘অবিচার ও আক্রমণ’। বাংলার মানুষের মনে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যে ক্ষোভ জমে উঠেছে, এবার সেই ক্ষোভকে সংগঠিত প্রতিবাদে পরিণত করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “বাংলা ভাষা আজ আক্রান্ত। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সব কিছুতে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। বাংলা ভাষা লোপাটের চক্রান্ত চলছে। আমরা এটা মেনে নেব না। এবার শুরু হলো ভাষারক্ষার শপথ।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন, “২৭ জুলাই নানুর দিবসের দিন থেকে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে প্রতিটি শনিবার ও রবিবার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সভা, মিছিল ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হবে। এটা একটা গণআন্দোলন হবে। দল ও সংগঠনের সবাই এতে শামিল হবেন।”
নানুর দিবস তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্মারক। এই দিনটি প্রতিবছর পালন করা হয় বীরভূম জেলার নানুরে দলের নিহত কর্মীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। এবার সেই দিবস থেকেই শুরু হচ্ছে ভাষার দাবিতে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন। একে তৃণমূল শিবির ‘নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ বলেই দেখছে।
মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছোটো করছে। বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে অন্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নামব। সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর প্রতিবাদ গড়ে তুলব।”
প্রতি ব্লকে স্থানীয় নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে কর্মসূচি চলবে
শনিবার ও রবিবার মিটিং, মিছিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে
ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠন সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে আলোচনাসভা, কবিতা পাঠ, গান-আবৃত্তি হবে
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে তৃণমূলের এই ‘ভাষা আন্দোলন’ বিজেপির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক এবং আবেগের একটি কৌশলগত অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। এই ভাষাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে সমানভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির তরফে যদিও এখনও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা এই আন্দোলনের মাধ্যমে তৃণমূল আগামী নির্বাচনে ‘বাঙালিয়ানা’কে হাতিয়ার করতে চাইছে।
আগামী দিনে বাংলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস যে রাজনৈতিক ময়দানে ‘ভাষা রক্ষা’কে মুখ্য ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে চলেছে, তা এদিনের মমতার ঘোষণাতেই স্পষ্ট। এখন দেখার, এই কর্মসূচি কতটা সফল হয় এবং রাজনৈতিকভাবে কতটা প্রভাব ফেলে রাজ্যবাসীর মনে।