এক মঞ্চে মোদী-মমতা? দুর্গাপুরের সভায় আমন্ত্রিত ৮ জন তৃণমূল সাংসদ

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে সরকারি সভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেই উপলক্ষে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের আয়োজন করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে…

TMC Claims Chenab Rail Bridge was the Brainchild of Mamata Banerjee

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে সরকারি সভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেই উপলক্ষে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের আয়োজন করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এক চমকপ্রদ বিষয়—বিজ্ঞাপনে নাম রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্তত ৮ জন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদের। অথচ তৃণমূলের তরফে দাবি, তাঁদের কেউই কোনও আমন্ত্রণপত্র পাননি! ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, দুর্গাপুরের সভায় উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমানের বেশ কিছু সাংসদের নাম। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যাঁদের নাম পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সৌমিত্র খাঁ (যদিও তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, আবার পরে ঘরও ফিরেছেন), মালা রায়, শতাব্দী রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দু শেখর রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু সেন ও দিব্যেন্দু অধিকারীর মতো তৃণমূল সাংসদরা। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও বিজ্ঞাপনে জায়গা পেয়েছে।

   

এই ঘটনা সামনে আসতেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদ বলেন, “আমাদের কারও কাছেই এখনও কোনও অফিসিয়াল আমন্ত্রণপত্র আসেনি। অথচ আমাদের নাম বিজ্ঞাপনে কেন দেওয়া হল? এটা কি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা?” তিনি আরও বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার করে তুলেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিজ্ঞাপনে নাম দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী।”

এদিকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আদতে তারা দেখাতে চাইছে, রাজ্য সরকার ও তৃণমূল সাংসদেরা এই প্রকল্পের সঙ্গেই যুক্ত, যাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা যায়।”

বিজেপির তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র বলেন, “এটি একটি সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারের পক্ষ থেকেই প্রটোকল মেনে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়ে থাকে। কার কাছে আমন্ত্রণ পৌঁছেছে বা পৌঁছয়নি, সেটা জানতে গেলে প্রশাসনের কাছে খোঁজ নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে যথাযথ পদ্ধতি মেনেই নাম দেওয়া হয়েছে।”

Advertisements

তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এই ‘নাম থাকলেও আমন্ত্রণ না পাওয়া’র বিতর্ক বিজেপির পরিকল্পনারই অংশ। কারণ সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে সামনে এনে জনসংযোগ তৈরি করতেই চাইছে কেন্দ্র। সেখানে রাজ্যের শাসক দলের নেতানেত্রীর নাম বিজ্ঞাপনে তুলে ধরে বার্তা দিতে চাইছে—উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতি নেই, সবাইকেই তারা পাশে চায়। আবার অন্যদিকে, বাস্তবে আমন্ত্রণ না দিয়ে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দাও তোলার কৌশল হতে পারে।

রাজ্য প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী সভায় যাবেন কি না, তাও স্পষ্ট নয়। এর আগে অনেকবারই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে রাজ্য সরকার। সেই ধারাই কি আবার দেখা যাচ্ছে? নাকি এ কৌশল নতুন করে রাজনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখা গড়ছে—তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে।

সর্বোপরি, এই ঘটনা প্রমাণ করছে, নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুর সফরকে ঘিরে শুধু প্রশাসনিক গুরুত্ব নয়, রাজনৈতিক তর্জাও জোরালোভাবে জুড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব আগামী দিনে রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্ক ও রাজনীতির উপরও পড়তে পারে।