পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বৈঠকে এক অগ্নিমূলক পরিস্থিতি তৈরি হল, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র ভাষায় বিজেপি এবং শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেন। এই ঘটনায় বিজেপি এবং তৃণমূলের বিধায়কদের মধ্যে তুমুল বচসা এবং স্লোগানের মাধ্যমে বিধানসভার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল, শুভেন্দু অধিকারীর সংখ্যালঘু বিধায়কদের বিরুদ্ধে দেওয়া বিতর্কিত মন্তব্য।
সূত্রে জানা যায়, মমতা যখন বিধানসভায় প্রবেশ করেন, তখনই গোলাম রব্বানি সহ কিছু তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হন। শুভেন্দু বলেছিলেন যে সংখ্যালঘু বিধায়কদের ‘‘চ্যাংদোলা’’ করে বাইরে ফেলে দেওয়া উচিত। এর প্রতিবাদে তৃণমূল বিধায়কেরা নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আর এই ঘটনার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপি বিধায়কেরা স্লোগান দিতে শুরু করেন, এবং বিধানসভায় তীব্র চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়।
মমতা এরই মধ্যে নিজের বক্তব্য দিতে থাকেন, কিন্তু বিধানসভার পরিবেশ এতটাই উত্তাল হয়ে উঠেছিল যে তাঁকে কিছু সময়ের জন্য বক্তৃতা থামাতে হয়। স্পিকার বারবার চেষ্টা করেছিলেন বিধানসভাকে শান্ত করার, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় না। মমতা আবারও নিজের বক্তব্য শুরু করেন এবং পাল্টা আক্রমণ শানাতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ধর্মীয় কার্ড খেলেন, কিন্তু ধর্মের সবচেয়ে বড় দীক্ষা হচ্ছে মানবিকতা। ধর্মের নামে জালিয়াতি করবেন না। আমি একজন হিন্দু, আমি কী আপনাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেবো?’’
এখানে মমতার আক্রমণ আরও তীব্র হয়। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাকে অবমাননা করবেন না। বাংলা কে ভাগ করার চেষ্টা করবেন না। আপনি কেন মুসলমানদের টিকিট দেন না? আমি তো ৭৯ শতাংশ হিন্দুদের টিকিট দিই, মহিলাদের টিকিট দিই। আসলে কাক এখন ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করছে।’’ এরপর তিনি বলেন, ‘‘রোজার মাসকে বেছে নিয়েছে মুসলমানদের আঘাত করার জন্য। সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্তে থাকুন, সর্ব ধর্ম সমন্বয় জিন্দাবাদ।’’
মমতার এই মন্তব্যের পর বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ পাল্টা আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা, হুমায়ূন কবির প্রতিদিন হিন্দুদের আক্রমণ করছেন, তাদের বেলায় কী হবে?’’ তাঁর এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে ধারাবাহিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে বিধানসভা কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে।
এদিনের ঘটনার পর, রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই সংঘর্ষ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য এবং বিজেপির পাল্টা আক্রমণ রাজ্যের রাজনীতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু করেছে। রাজ্যের ধর্মীয় পরিস্থিতি এবং রাজনীতির মাঝে এ ধরনের উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের তীব্র বাকযুদ্ধ রাজ্যের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে চ্যালেঞ্জ করে। বিধানসভায় এমন অস্থিরতা ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।