বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এক বেনজির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বক্তৃতাকে ঘিরে। এদিন বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর দেশজুড়ে বিভিন্নভাবে হওয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আনেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ভাষণের সময়েই শুরু হয় বিজেপি বিধায়কদের তুমুল প্রতিবাদ। বিধানসভায় কাগজ ছোড়া, স্লোগান, ধস্তাধস্তি—এইসব ঘটনায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিষয়টিকে “গণতন্ত্রের উপর আঘাত” বলে অভিহিত করেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই। তিনি যখন বলছিলেন, “বাংলা ভাষা ও বাঙালির উপর যে আক্রমণ নেমে এসেছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে,” তখনই বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁরা চিৎকার করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাধা দেন। বিধানসভা কক্ষে শুরু হয় তীব্র হট্টগোল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার কথা যাতে মানুষ শুনতে না পায়, আমার কণ্ঠরোধ করার জন্যই এই কর্মসূচি বিজেপির। ওরা সকালে ছিল না, আমি আসার কিছুক্ষণ আগে এসেছিল। যখন নাম ডাকা হয়, তখন কিছু বলেনি। কিন্তু যেই আমি বলতে শুরু করলাম, অমনি গোলমাল শুরু করল। আমি বলবই, আমার কণ্ঠরোধ করা যাবে না।” এই ঘটনার পর বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়করা শৃঙ্খলা বজায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ান। মুখ্যমন্ত্রী নিজে উঠে গিয়ে ওয়েলে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি দলের বিধায়কদের আসনে ফিরে যেতে বলেন এবং ভাষণ চালিয়ে যান।
বিরোধীদের এই আচরণ নিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই আচরণ বিধানসভার মর্যাদাহানিকর। এমন ঘটনা আগে খুব কম দেখা গিয়েছে। সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ককে বলেও কোনও লাভ হয়নি।”
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনার পর নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মানুষের কাছে না পৌঁছায়। অন্যদিকে বিজেপি বলেছে, তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর সাসপেনশন ইস্যুতে, আর সেই কারণেই তাঁদের প্রতিবাদ।
তবে সাধারণ মানুষের একাংশ মনে করছেন, বিধানসভা একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, এবং সেখানে এমন অশান্তি বা ধস্তাধস্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তার প্রকাশ ঘটতে হবে শালীনতার মধ্য দিয়ে।
এই ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল, বাংলার রাজনীতিতে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। বিধানসভার মতো গম্ভীর জায়গাও এখন আর বাদ নেই রাজনৈতিক সংঘাত থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ ব্যাহত করার চেষ্টা ও তার বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান রাজনৈতিকভাবে আগামী দিনে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।