কলকাতা: কসবা আইন কলেজ (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে শুনানির সময় সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন। তিনি আদালতকে জানান, নির্যাতিতাকে সুস্থ করতে ইনহেলার ব্যবহার করা হয়নি, বরং উদ্দেশ্য ছিল আরও বেশি নির্যাতন চালানো। এই বক্তব্য আদালতে শুনিয়ে সরকারি পক্ষ দাবি করে, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এবং তার দুই সহযোগী জ়াইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত পরিকল্পিত ও নৃশংসভাবে এই অপরাধ ঘটিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘‘নির্যাতিতার যখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, তখন ইনহেলার ব্যবহার করে তাঁকে কিছুটা সুস্থ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, শারীরিকভাবে সুস্থ করে আরও নির্যাতন চালানো।’’ শুধু নির্যাতিতার বয়ান নয়, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ইলেকট্রনিক প্রমাণ এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক তথ্যও একই দাবি করছে বলে জানান তিনি।
আদালত এদিন মনোজিৎ মিশ্র, জ়াইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে ৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। অপর অভিযুক্ত, কলেজের নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, নিরাপত্তার কারণেই এদিন অভিযুক্তদের সশরীরে আদালতে হাজির করা হয়নি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে (Kasba Law College) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এরপর নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে মনোজিৎ মিশ্রকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আরও দুই আইন ছাত্র জ়াইব ও প্রমিত এবং নিরাপত্তারক্ষী পিনাকীকেও গ্রেফতার করা হয়।
এদিন আদালতে নির্যাতিতার পক্ষের আইনজীবী অয়ন পাল সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী নিজে গেট বন্ধ করেছিলেন। ফলে তিনিও এই অপরাধে যুক্ত। সে একজন ষড়যন্ত্রকারী।’’ আদালতে তিনি আরও জানান, কোনোভাবেই যেন পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন না দেওয়া হয়। সরকারি পক্ষও একই দাবি জানায়। আদালত সেই যুক্তি মেনে তাঁকেও তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী এদিন আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নির্যাতনের সময় কিভাবে ইনহেলার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও অত্যন্ত নৃশংস। শুধু তাই নয়, মেডিক্যাল রিপোর্টে নির্যাতিতার শারীরিক ক্ষত চিহ্ন ও ইনজুরি প্যাটার্ন এই ঘটনাকেই সমর্থন করছে। তদন্তে ইলেকট্রনিক প্রমাণও মিলেছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষাও চলছে। সেখান থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন নির্যাতিতার পরিবার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্তে আপাতত আরও কিছু সময় প্রয়োজন। আগামী দিনে নতুন তথ্য সামনে আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে তদন্তকারী দল।