সম্প্রতি ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় হয়ে উঠেছে রাজ্যরাজনীতি৷ কিন্তু এবার ফিরহাদের (Firhad Hakim) পাশে দাঁড়ালেন মদন মিত্র (Madan Mitra) । সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে ফিরহাদের করা মন্তব্য ঘিরে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি নেত্রীকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন ফিরহাদ হাকিম(Firhad Hakim)। যদিও ফিরহাদ নিজে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই বিতর্কে ফিরহাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মদন মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “মাল বলার মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই। বিজেপি তো মাল-ই।”
বুধবার হাড়োয়া বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)বক্তব্য রাখতে গিয়ে রেখা পাত্রকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন, তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বসিরহাট লোকসভা নির্বাচনে কয়েক লক্ষ ভোটে পরাজিত হন রেখা পাত্র। এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, “প্রার্থী দিলেন সন্দেশখালিতে। তিনি কোথায় আছেন? ওই ভদ্রমহিলা হাজি নুরুলের বিরুদ্ধে কেস করেছিলেন, ভোটে হেরে গিয়ে কেস করলেন। বিজেপি কেস করতে জানে, মানুষের পাশে থাকতে জানে না।”
ফিরহাদের এই মন্তব্যের পর থেকেই রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়। বিজেপি অভিযোগ তোলে যে, একজন নারী নেত্রীকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এই প্রেক্ষিতে বিজেপির নেতারা বলেন, “এটি শুধু একজন নারীকে নয়, রাজ্যের নারীদের প্রতি কটাক্ষ।”
এই পরিস্থিতিতে মদন মিত্রের মন্তব্য বিষয়টিকে আরও বড় আকার দেয়। মদন বলেন, “মাল বলার মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই। বিজেপি তো মাল।” এই বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকেও নিন্দা করেছেন এবং একে অশালীন বলে উল্লেখ করেছেন।
আর জি কর হাসপাতালে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর নারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে রাজ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত। এই প্রেক্ষিতে এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে যে, ফিরহাদ বা মদনের বক্তব্যকে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হচ্ছে।
ফিরহাদ হাকিম অবশ্য নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসার চেষ্টা করেননি। তাঁর মতে, “বিজেপি নেতারা মিথ্যা অভিযোগ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। আমার কথাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি স্রেফ রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরেছি।”
বিজেপি সহ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলি এই ধরনের মন্তব্যকে রাজনীতির অধঃপতনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, একজন নেত্রীকে নিয়ে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার আদর্শ রাজনীতির অংশ হতে পারে না। রাজ্যের বিভিন্ন নারী সংগঠনও এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং নারীদের প্রতি রাজনৈতিক মঞ্চে সম্মানজনক আচরণ করার দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচুর আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই ধরনের মন্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। তবে কিছু অংশ আবার এটিকে কেবল রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
রাজ্যের রাজনীতি প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন নতুন আকার নিচ্ছে। কিন্তু তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও ভাষার শালীনতা এবং নারীদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিরহাদ হাকিম এবং মদন মিত্রের এই মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি রাজনীতির মানসিকতার উন্নয়নের জন্য বড় একটি প্রশ্নচিহ্নও সৃষ্টি করেছে।