বঙ্গোপসাগরের (weather update) ওপর আবারও শক্তিশালী নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা শীতকালীন আবহাওয়ার মধ্যে এক বিরাট সংকেত হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই নিম্নচাপের (weather update) প্রভাব ইতিমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে অনুভূত হতে শুরু করেছে, এবং এর জেরে দক্ষিণ ভারত, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং তামিলনাড়ুর উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের খবর (weather update)অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে চেন্নাই এবং ডেল্টা অঞ্চলে, যেখানে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে (weather update) এই নিম্নচাপটি বর্তমানে পল্ক স্ট্রেইট এবং মান্নার উপসাগরের ওপর দিয়ে চলমান রয়েছে। নিম্নচাপটি পূর্ব দিকে সরতে থাকলেও এটি আরও শক্তিশালী হতে পারে। প্রথমে শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং তামিলনাড়ুর উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে চেন্নাই, কারাইকাল, আথিরামপট্টিনম এবং নাগাপট্টিনামে গতকাল সকাল এবং বিকেলে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে।
চেন্নাই এবং তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই বেশি। এই বৃষ্টিপাতের ফলে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তা, গলিপথ ও আন্ডারপাসে জল জমে যাওয়ায় যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ার এবং ছোট বড় দুর্ঘটনারও খবর পাওয়া গেছে।
শীতকাল মূলত ভারতে একটু শুষ্ক এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার সময়, কিন্তু এই নিম্নচাপের কারণে আবহাওয়ার অবস্থা কিছুটা বদলাচ্ছে। শীতের মাঝেই এমন বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষদের জন্য এক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত, শীতকালে উত্তরের হিমালয় অঞ্চলে তুষারপাত এবং ঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণ ভারতের দিকে চলে আসে, তবে এই নিম্নচাপের ফলে দক্ষিণ উপকূলে ঘন মেঘ ও বৃষ্টির সৃষ্টি হচ্ছে, যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য অস্বাভাবিক।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীজুড়ে আবহাওয়ার অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের ওপর সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপও এর একটি প্রমাণ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সাগরের উষ্ণতা বাড়ছে, যা এই ধরনের বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য দুর্যোগের পরিস্থিতি তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি বছর এই ধরনের নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা বেড়েছে, এবং এই প্রক্রিয়া আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সতর্কতা দেয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই নিম্নচাপটি বর্তমানে শক্তিশালী হলেও এটি পরবর্তীতে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে এটি দক্ষিণ উপদ্বীপের উপর দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে, এর প্রভাব একেবারে শেষ হয়ে যাবে এমন নয়। এমন পরিস্থিতিতে কেবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নয়, বরং বাতাসের গতিবেগও বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই নিম্নচাপের প্রভাব মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকার এবং আবহাওয়া দফতর আগেই সতর্কতা জারি করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। চেন্নাই এবং তামিলনাড়ুর অন্যান্য প্রান্তে সরকারি কর্মসূচি চলমান রয়েছে, যাতে জলাবদ্ধতা এবং বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।
এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষদেরকে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্ক থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। পানির স্তর বৃদ্ধি, রাস্তা ভেঙে পড়া, গাছপালা উপড়ে পড়ার মতো সম্ভাবনাগুলি চিন্তা করে সেখানে বিপদসংকুল স্থানে চলাচল থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।