কলকাতা পুলিশ এবার আরও আধুনিক এবং কার্যকরী নজরদারির জন্য আকাশপথে নিয়ন্ত্রণের শক্তি বাড়াতে চলেছে। লালবাজারে নতুন দুটি অত্যাধুনিক ড্রোন আনার পরিকল্পনা চলছে, যেগুলি শহরের উপর ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে গিয়ে নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে। এই ড্রোনগুলি কলকাতার নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে চলেছে, যা ঈগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মতো আকাশ থেকে শহরের প্রতিটি কোণায় নজর রাখতে পারবে।
কলকাতা পুলিশের বর্তমান ড্রোনগুলি দুই থেকে তিন কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে ছবির ধারণ ক্ষমতা রাখলেও, এই নতুন ড্রোনগুলির ক্যামেরার ক্ষমতা অনেক বেশি। এই ড্রোনগুলির ক্যামেরা ৩ কিলোমিটার পরিধি পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করতে পারবে, যা সুরক্ষা ও নজরদারির কাজকে আরও কার্যকরী করবে। বিশেষ করে বড় বড় এলাকার, যেমন ভাঙড় ও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার নজরদারি, যেখানে বিস্তীর্ণ মাঠ, ধান-সবজি খেত, মাছের ভেড়ি রয়েছে, সেসব এলাকায় একসঙ্গে নজরদারি রাখার জন্য এই নতুন ড্রোনগুলো অত্যন্ত উপকারী হবে।
এছাড়াও, শহরের অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে এই ড্রোনগুলি আরও বেশি কার্যকরী হবে। যদি কোনও বহুতলের ছাদে লোকজন আশ্রয় নেয়, বা কেউ ধোঁয়ার মধ্যে আটকে থাকে, তখন ড্রোনগুলি তাদের উদ্ধারকার্যে সাহায্য করতে পারে। এই ড্রোনগুলির ক্যামেরা এবং সেন্সর প্রযুক্তি এমনভাবে ডিজাইন করা হবে, যাতে একদিকে যেমন ছবি ও ভিডিও স্পষ্ট থাকবে, তেমনি ড্রোনের পরিবহন ক্ষমতাও অনেক উন্নত হবে।
লালবাজারের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই ড্রোনগুলির প্রতিটির ওজন হবে মাত্র ১ কিলোগ্রাম, এবং এটি একটানা প্রায় ৪০ মিনিট উড়তে সক্ষম হবে। ব্যাটারির ক্ষমতাও অনেক উন্নত করা হয়েছে, যা দীর্ঘ সময় ধরে উড়ে এসে অক্ষত অবস্থায় নজরদারি চালাতে পারবে। পুরনো ড্রোনগুলির তুলনায় এই ড্রোনগুলির পাখার শব্দও অনেক কম হবে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও গোপনীয় এবং নিখুঁত করবে।
এছাড়াও, নতুন ড্রোনগুলির সেন্সর প্রযুক্তি এভাবে সাজানো হবে যে, যদি কোনো বাধা আসে বা ড্রোনটি জলাশয় বা মাটির কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে অপারেটরকে তা সতর্ক করবে। ফলে, অপারেটররা সহজেই যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং ড্রোনের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম হবেন।
কলকাতার জনসংখ্যা ও এর বিস্তৃত অঞ্চল মাথায় রেখে, এই নতুন প্রযুক্তি কলকাতা পুলিশের কাজের গতি এবং সঠিকতার পরিসরকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তাছাড়া, শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও কার্যকরী করে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নতুন ড্রোনগুলো শুধুমাত্র নজরদারি করবে না, বরং বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও উদ্ধারকাজেও সাহায্য করবে, যা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে।
অতএব, কলকাতার নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে আকাশ থেকে তীক্ষ্ণ নজরদারি শহরের প্রতিটি কোণায় অবিরত চলবে।