পুলিশের লাঠি তে রক্ষা নেই! কুনালের মামলায় জেরবার তিলোত্তমার পরিবার

আগেই আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন। এবার আরও এক ধাপ এগোলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) । বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে মানহানির মামলা…

Kunal Ghosh Slaps Defamation Case Against Tilottama’s Father

আগেই আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন। এবার আরও এক ধাপ এগোলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) । বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে মানহানির মামলা দায়ের করলেন তিলোত্তমার বাবার বিরুদ্ধে। কুণালের অভিযোগ, তিলোত্তমার বাবা প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব মন্তব্য করেছিলেন, তা শুধু অপমানজনকই নয়, তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি এবং ব্যক্তিগত সম্মান দু’টোই নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল।

কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) প্রথম থেকেই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেননি। আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি আগে আইনি নোটিস পাঠান তিলোত্তমার বাবাকে। নোটিসে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছিল, প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার তো প্রশ্নই নেই, উল্টে তাঁরা নিজের বক্তব্যেই অটল থাকেন। এর পরেই কুণাল ঘোষ আদালতের দ্বারস্থ হন।

   

তিলোত্তমার পরিবারের দাবি, তাঁরা যা বলেছেন, তাতে কোনও মানহানি নেই। বরং তাঁরা সত্যিটাই তুলে ধরেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কুণাল ঘোষ তাঁদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। এই অভিযোগ ঘিরে এখন রীতিমতো বিভাজন তৈরি হয়েছে জনমহলে। একাংশ মনে করছে, সমালোচনা সহ্য করতে না পেরেই কুণাল এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যদিকে, কুণালের সমর্থকরা বলছেন, জনসমক্ষে নেতার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মানহানির মামলা প্রমাণ করা কঠিন হলেও যদি প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্ত ইচ্ছাকৃতভাবে কুণালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন, তাহলে শাস্তির সম্ভাবনা প্রবল। এই মামলায় কুণালের আইনজীবী দল আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে, যা আদালতে পেশ করা হবে। অন্যদিকে, অভয়া পরিবারের আইনজীবীরাও প্রস্তুত। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ নিজের মত প্রকাশ করলে তাকে ‘মানহানি’ বলা যায় না।

এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে অভয়া পরিবার। পুলিশি জেরার পাশাপাশি তাঁদের ওপর চাপ বাড়ছে দিন দিন। পরিবার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, মামলার পর থেকেই ভীষণ মানসিক চাপে রয়েছেন অভয়ার বাবা। পরিবারেও তৈরি হয়েছে অশান্তি। স্থানীয় মহলেও এই মামলা নিয়ে গুঞ্জন কম নয়। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ কেউ অভয়া পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও অনেকে আবার কুণালের পদক্ষেপকেই সঠিক বলে মনে করছেন।

Advertisements

রাজনৈতিকভাবে এই মামলা তৃণমূলের পক্ষে বড় পদক্ষেপ। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করছে, কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন। তাঁদের মতে, তৃণমূলের নেতারা সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না। অন্যদিকে, বাম এবং কংগ্রেস সরাসরি মন্তব্য না করলেও বলছে, এই মামলা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মোড় নিতে পারে।

কুণাল ঘোষ অবশ্য একেবারেই রাজনৈতিক দিক থেকে দূরে সরে গিয়ে বিষয়টি ব্যক্তিগত আঘাত হিসেবে দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি অপমানিত বোধ করেছি। তাই আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। এটা আমার ব্যক্তিগত লড়াই। রাজনীতি এখানে নেই।” তিনি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বললে আমি চুপ করে বসে থাকব না। এটা শুধু আমার নয়, যে কোনও নাগরিকের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।”

সব মিলিয়ে, কুণালের মামলায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে অভয়া পরিবার। আদালতের নির্দেশে আগামী দিনে মামলার গতিপথ ঠিক হবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, এই মামলার ফলে শুধু কুণাল ও তিলোত্তমার পরিবারের লড়াই নয়, বাংলার রাজনীতিতেও ব্যক্তিগত সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।