নির্যাতিতার মা-বাবা সহানুভূতি হারাচ্ছেন, বিজেপিকে আক্রমণ কুণালের

কলকাতা: রাখির দিন নবান্ন অভিযান ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপিকে একহাত নিলেন।…

নির্যাতিতার মা-বাবা সহানুভূতি হারাচ্ছেন, বিজেপিকে আক্রমণ কুণালের

কলকাতা: রাখির দিন নবান্ন অভিযান ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপিকে একহাত নিলেন। শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, একই সঙ্গে নির্যাতিতার মা-বাবার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি।

কুণাল ঘোষের অভিযোগ, “অকারণে মানুষের সহানুভূতি হারাচ্ছেন নির্যাতিতার মা-বাবা।” তাঁর কথায়, যাঁরা রাখির মতো পবিত্র দিনে রাজনৈতিক অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, তাঁরা কীভাবে নিজেদের হিন্দু বা সনাতনী দাবি করেন, তা মানুষকে ভেবে দেখতে হবে। তিনি বলেন, “লোকই নেই। ৮০ থেকে ১০০ জন, এখানে-ওখানে থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে মোট ৫৩০ জন লোক জড়ো করেছে বিজেপি। রাখির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি? শুনেছেন কখনও? চূড়ান্ত ফ্লপ, দিশেহারা কর্মসূচি।”

   

কুণাল ঘোষ নবান্ন অভিযানের যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, “তদন্ত করছে সিবিআই। ক্ষোভ নাকি সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। সিবিআই নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি, আর বিজেপিকে নিয়েই নবান্ন অভিযান? গেলেন কী করে? আপনাদের তো সিজিও যাওয়া উচিত ছিল।” তাঁর কথায়, এই ধরনের কর্মসূচির একটি সীমা থাকা উচিত, যেখানে ভিকটিমের পরিবারের আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হবে না।

যদিও কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করেন যে তিলোত্তমার মা-বাবার প্রতি তাঁর পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মান রয়েছে। তিনি বলেন, “তাঁরা যদি কোথাও আহত হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি তাঁদের প্রতি থাকবে। কিন্তু বিজেপি তাঁদের রাস্তায় নামিয়ে পুলিশের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে, নিজেদের ধস্তাধস্তি করে নাটক করেছে। এই রাজনৈতিক নাটকের তীব্র বিরোধিতা করছি।”

কুণাল ঘোষ এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে ‘মুখোশধারী’ অভিযোগও আনেন। তাঁর দাবি, “কিছু মুখোশধারী নাটক করতে গিয়েছিল কিছু অতিথি শিল্পীকে নিয়ে।” তাঁর ইঙ্গিত, বিজেপির আন্দোলনে বাইরের কিছু লোককে ব্যবহার করা হয়েছে শুধু চিত্রনাট্য সাজাতে।

Advertisements

এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস ভিকটিম পরিবারের কণ্ঠস্বর দমন করার চেষ্টা করছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেই তাঁদের এই নবান্ন অভিযান। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এই কর্মসূচি করেছে।

তিলোত্তমা কাণ্ডের পর থেকে রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। বিরোধী দলগুলি তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে তদন্ত প্রক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতার অভিযোগে। অন্যদিকে, শাসকদল দাবি করছে, তদন্ত নিরপেক্ষভাবেই চলছে এবং বিরোধীরা শুধুমাত্র পরিস্থিতি ঘোলা করছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাখির মতো আবেগঘন দিনে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। একদিকে ভিকটিম পরিবারের প্রতি মানুষের সহানুভূতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ—দুইয়ের সংঘর্ষে তৈরি হচ্ছে তীব্র বিতর্ক। এর ফলে মূল ইস্যু থেকে জনআলোচনা সরে গিয়ে রাজনীতিকেই কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসছে।