রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) বক্তব্য। আর জি কর হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু শিল্পীর প্রতিবাদ এবং তার জেরে তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বয়কটের ডাক—এই দুই ইস্যুতে সরগরম বাংলার রাজনীতি। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর, কুণাল ঘোষের সুরে কিছুটা নমনীয়তা দেখা গেল।
অভিষেকের বক্তব্যে পাল্টা বার্তা
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কে কোথায় প্রতিবাদ করবে, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি কাউকে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। আমাদের দল কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না।” অভিষেক আরও বলেন, “একজন শিল্পী আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদ করায় তার শো বাতিল হয়েছে। আমি প্রোগ্রাম কমিটির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করি। বাংলার মাটিতে সবাই প্রতিবাদ করতে পারে। আমরা শিল্পীদের মতামতকে সম্মান করি।”
অভিষেকের এই বক্তব্যে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা পাওয়া গেল। দলের তরফ থেকে কোনও শিল্পী-বয়কটের নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া
অভিষেকের বক্তব্যের পরেই কুণাল ঘোষ তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি যা বলেছি, তা দলের কর্মীদের আবেগ থেকে বলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলবেন, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি তার প্রতিটি নির্দেশ মাথা পেতে নেব।”
কয়েকদিন আগে কুণাল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লেখেন, “যে শিল্পীরা পরিকল্পিতভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলকে অপমান করেছেন, তাদের দলীয় মঞ্চে জায়গা দেওয়া উচিত নয়। তবে যাঁরা সাধারণ প্রতিবাদ করেছেন, তারা আমাদের সঙ্গে সহমত না হলেও, তাদের প্রতি আমাদের কোনও ক্ষোভ নেই।”
তবে অভিষেকের বক্তব্যের পর কুণাল আবারও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমরা পরিকল্পিত কুৎসা আর সাধারণ প্রতিবাদের মধ্যে পার্থক্য করেছি। দলীয় মঞ্চে কিছু শিল্পীর জায়গা দেওয়া নিয়ে আমার বক্তব্য কর্মীদের আবেগ থেকে এসেছে।”
দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি
শিল্পীদের বয়কট প্রসঙ্গে কুণালের প্রথম বক্তব্যের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিছু নেতার মতে, কুণালের এই মন্তব্য দলের উদার ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আবার অন্য পক্ষের দাবি, কুণাল যা বলেছেন, তা অনেক কর্মীর মনের কথা।
অভিষেকের বক্তব্যের পর দলীয় নেতাদের একাংশ মনে করছেন, বিষয়টি এখানেই থেমে যাবে। তবে কুণালের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়া এই ইস্যুকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে।
শিল্পী সমাজের প্রতিক্রিয়া
শিল্পী মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কেউ কেউ কুণালের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, “শিল্পীদের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া অন্যায়।” আবার কিছু শিল্পী কুণালের অবস্থানকে সমর্থন করে বলেছেন, “যারা সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করে, তারা দলের মঞ্চে জায়গা পাওয়ার দাবি করতে পারে না।”
মমতার অবস্থান কী?
এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করেছেন যে, মমতার নির্দেশই তার কাছে চূড়ান্ত। দলীয় কর্মীদের একাংশও মমতার বক্তব্যের অপেক্ষায় রয়েছেন।
শিল্পী-বয়কট বিতর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি নতুনভাবে সামনে এসেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে দল সামগ্রিকভাবে নমনীয়তার বার্তা দিতে চাইলেও কুণালের মন্তব্য বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী সিদ্ধান্ত নেন এবং তা দলীয় সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কী প্রভাব ফেলে।