সম্প্রতি কলকাতার কসবা এলাকায় চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর একটি অংশ আন্দোলনে নেমেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে তাঁদের চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকে তারা সরকারের কাছে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বারবার পথে নামছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নেতাজি ইন্ডোরে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, কিন্তু তাতেও থামেনি বিক্ষোভ।
বুধবার কলকাতার নগরপাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, পুলিশ বাধ্য হয়েই বলপ্রয়োগ করেছে, কারণ আন্দোলনকারীরা নিরস্ত্র পুলিশ কর্মীদের ওপর শারীরিক হেনস্থা করেছেন। এর পরের দিনেই তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের একাংশ এক পুলিশ কর্মীর কলার ধরে টানাটানি করছেন এবং তাঁকে ধাক্কা দিচ্ছেন।
এই ভিডিও প্রকাশ করে কুণাল ঘোষ লেখেন, “কসবায় চাকরি চাইতে এটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন? পুলিশকে বিনা প্ররোচনায় মার শান্তিপূর্ণ?” তিনি আরও বলেন, “চাকরির এই জটিলতার সঙ্গে ডিআই অফিসে হামলার সম্পর্ক কী?” তাঁর প্রশ্ন, যখন পুলিশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর বলপ্রয়োগ করলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন পুলিশ যখন আক্রান্ত হয়, তখন সেই ছবি কেন সামনে আসে না?
অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের দীর্ঘদিনের কষ্ট ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তাঁরা প্রতিবাদ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষোভ থেকেই হয়তো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু পুরো আন্দোলনকে হিংসাত্মক বলা অনুচিত।
কসবায় চাকরি চাইতে এটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন? পুলিশকে বিনা প্ররোচনায় মার শান্তিপূর্ণ? চাকরির এই জটিলতার সঙ্গে ডিআই অফিসে হামলার সম্পর্ক কী? যে সব মিডিয়া পুলিশের অবাঞ্ছিত একটি বিক্ষিপ্ত মুহূর্ত দেখিয়ে বড় বড় কথা বলছে, তারা এই ফুটেজটা, ওই নিরস্ত্র পুলিশটির উপর হামলার ছবিটা… pic.twitter.com/UxlX0kSfRD
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) April 10, 2025
তবে এই প্রশ্ন থেকেই যায়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সংজ্ঞা কী? যেখানে পুলিশের ওপর হাত তোলা হয়, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর হয়, তা কি আদৌ শান্তিপূর্ণ বলা যায়? আবার একইভাবে, শুধুমাত্র কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য কি পুরো আন্দোলনকে অশান্ত ও অপরাধমূলক বলা ঠিক হবে?
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবও অনস্বীকার্য। একদিকে রাজ্য সরকার নিজে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছে, অন্যদিকে পুলিশের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগ হচ্ছে। ফলে দ্বৈত চিত্র তৈরি হচ্ছে জনমানসে।
শেষ কথা, আন্দোলনকারীদের দাবি যথার্থ হলেও তার প্রকাশ যদি হিংসায় পরিণত হয়, তা গণতান্ত্রিক পরিসরে গ্রহণযোগ্য নয়। একইসঙ্গে প্রশাসনেরও উচিত, আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে, বাস্তবসম্মত ও মানবিক সমাধান খোঁজা। ভিডিও প্রমাণ সামনে এনে কুণাল ঘোষ যেভাবে প্রশ্ন তুলেছেন, তা এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সূত্রপাত করেছে—শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে হিংসা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?