দ্রোহের গ্যালারিতে ডাক্তারদের কর্মবিরতির সময় মৃত বিক্রম ভট্টাচার্যের ছবি রাখতে হবে: কুনাল ঘোষ

রাজ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলার সময়ে বিনা চিকিৎসায় কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যু। শনিবার ফেসবুক পোস্টে কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh) দাবি করেছেন, RGKar হাসপাতালের দ্রোহের গ্যালারিতে…

TMC Leader Kunal Ghosh Attacks Tilottama's Parents Over Controversial Statements

রাজ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলার সময়ে বিনা চিকিৎসায় কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যু। শনিবার ফেসবুক পোস্টে কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh) দাবি করেছেন, RGKar হাসপাতালের দ্রোহের গ্যালারিতে (Droh Gallery) বিক্রমের ছবি রাখতে হবে, যাতে একদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার অবহেলা এবং অন্যদিকে তার মায়ের শোক ও প্রতিবাদ জনগণের কাছে তুলে ধরা যায়। কুনালের এই দাবি সামাজিক মাধ্যমসহ রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।

কুনাল ঘোষ তার পোস্টে লিখেছেন, “বিক্রম ভট্টাচার্য (Vikram Bhattacharyya), যিনি কোন্নগর থেকে কলকাতার RGKar হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, তাঁকে চিকিৎসা না দেওয়ার কারণে অকাল মৃত্যুর শিকার হতে হয়েছে। এই ঘটনা শুধু বিক্রমের পরিবারের জন্য দুঃখজনক নয়, এটি পুরো সমাজের জন্য এক বড় ক্ষতি। এই মৃতদেহের ছবি, তাঁর মায়ের শোক ও প্রতিবাদ — সবকিছুই যে কোনোভাবে প্রকাশিত হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”

   

তিনি আরও জানান, “RGKar হাসপাতালের দ্রোহের গ্যালারি সেইসব ঘটনা তুলে ধরার জন্যই তৈরি, যেখানে চিকিৎসকদের অবহেলা, অসন্তুষ্টি এবং জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। বিক্রমের ছবি সেখানে থাকা উচিত, যাতে এটি যেন একটি স্থায়ী প্রতিবাদ হয়ে ওঠে।” কুনাল দাবি করেছেন, এটি শুধুমাত্র একটি মৃত্যুর ছবি নয়, বরং এটা একটি সামাজিক আন্দোলন, যা চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আরও দায়িত্বশীল আচরণের দাবি করবে।

বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ বাড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিক্রমের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল এবং যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি বাঁচতে পারেননি। তবে তার পরিবার ও স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছে যে, চিকিৎসকেরা যথাযথভাবে মনোযোগ দেননি এবং বিক্রমকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন। রাজ্যে ডাক্তারদের কর্মবিরতি এবং প্রতিবাদ চলতে থাকে।

কুনাল ঘোষের মতে, এই ঘটনা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দুঃখের বিষয় নয়, বরং এটি একটি বড় সামাজিক সমস্যা, যা সমাজের সবাইকে একত্রিত করে। “বিক্রমের মায়ের শোক, তাঁর প্রতিবাদ — এসব যেন গোটা রাজ্য, দেশের মানুষ শোনে। এটি শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং একটি সংকট, যা আমাদের সবার জীবনের প্রতিফলন,” বলেন কুনাল।

এদিকে, কুনালের মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন যে, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের জন্য এই ধরনের প্রতিবাদ অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে কুনাল ঘোষের মন্তব্যের সমালোচনা করা হয়েছে, তারা বলছে, এই ধরনের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে, এবং এতে পরিস্থিতির সঠিক সমাধান সম্ভব হবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এই ধরনের বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে বরং স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। ডাক্তারদের কাজের মধ্যে যে অবহেলা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে, কর্মবিরতি বা রাজনৈতিক বিবৃতির মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বাস্তব সমস্যার সমাধান নয়।”

এছাড়া, এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যু যেন গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে এনে দিয়েছে এবং তার পরিবার, বিশেষ করে তার মায়ের কান্না, যেন এক প্রতীক হয়ে উঠেছে সামাজিক অস্থিরতার।