কলকাতা শহরের (kolkata City) জল জমার সমস্যা নতুন নয়। দানা’র প্রভাবে (Dana impact) সেই চিত্র গোটা শহর জুড়ে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পশ্চিম থেকে পূর্ব—শহরের প্রতিটি প্রান্তে হাঁটু জল জমার ছবি চোখে পড়ছে। জলবন্দি শহরবাসী। এমজি রোড, পার্ক স্টিট, বালিগঞ্জ এবং বেহালা—সব জায়গায় এক চিত্র, জল জমার দাপট। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এর পেছনে আসল কারণ কী?
কলকাতা একটি নিম্নাঞ্চলীয় শহর, যার ভৌগলিক কারণে জল জমার প্রবণতা রয়েছে। শহরটি গঙ্গা নদীর কাছাকাছি অবস্থিত, ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সময় জল নিষ্কাশনের সমস্যা বাড়ে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য দরকার একটি কার্যকরী জলনিকাশি ব্যবস্থা, যা দীর্ঘকাল ধরে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। পুরনো নিকাশি ব্যবস্থা কার্যকর নয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর কার্যকারিতা কমেছে।
তবে শুধু ভূগোলই নয়, কলকাতা পৌরসভার নিকাশি ব্যবস্থার দুর্বলতা এই জল জমার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন অংশে নিকাশি ব্যবস্থার অভাব এবং সংস্কারের অভাবে বর্ষাকালে জল জমা বেড়ে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে বৃষ্টির পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জল ণেবে যাবে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় অন্যরকম। শহরের রাস্তায় জল জমে থাকতে দেখা যায় দিনের পর দিন, ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়, সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই দাবি করেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
রাজনৈতিক তরজা এই পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে। শুক্রবার খোদ শাসক দলের সাংসদ সৌগত রায় কে দেখা যায় যোধপুর পার্কের বাড়িতে জল বন্দি হয়ে পড়েছেন। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করছে বিরোধীরা। গেরুয়া শিবিরের নেতা-নেত্রীরা অভিযোগ করছেন, শাসক দলের অব্যবস্থাপনা এবং গাফিলতির কারণেই জল জমার সমস্যা বেড়ে চলেছে। তারা সরকারের কাছে দাবী করছেন, কেন এই পরিস্থিতির সমাধান করা হচ্ছে না?
তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সমস্যা মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন বলছে, একটানা বৃষ্টির কারণে জল নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘণ্টা দু এক এর মধ্যে জল নেমে যাবে বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। তাদের কথা মতে, বর্ষাকালে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তারা পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে।
এদিকে, শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। প্রতিবার বৃষ্টির সময় তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। জল জমার কারণে বাসস্থানের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হয়। অনেক পরিবার নিজেদের ঘরবাড়ির জলমগ্ন হওয়ায় চিন্তিত।
শহরের এই জল জমার সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন একটি সঠিক পরিকল্পনা। নিকাশি ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা, জল নিষ্কাশনের জন্য নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। শহরের নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর সমাধান খোঁজার প্রয়োজন। এর পাশাপাশি, বর্ষার সময়ে পূর্ব প্রস্তুতির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে জলসঞ্চয় ও নিষ্কাশনের সমস্যা কমে আসে।
শহরের এক নাগরিকের কথা মতে, সমস্যা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি নগর পরিকল্পনার অঙ্গ। তাই, সকল দলের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় জল জমার সমস্যা প্রকট, সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।
সবশেষে বলা যায়, জল জমার সমস্যা কলকাতার নগরজীবনের একটি জটিল চিত্র। এটি শুধুমাত্র একটি ঋতুবিশেষের সমস্যা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী নগর পরিকল্পনার অভাবের ফল। সুতরাং, সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং কার্যকর পদক্ষেপের সময় এসেছে। কলকাতা শহরের নাগরিকদের জল যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।