বাজারে আগুন! বৃষ্টির জেরে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম

গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণে কার্যত নাকাল গোটা রাজ্য। সকাল-সন্ধ্যা থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শুধু যে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে তা নয়, বরং তার…

kolkata-todays-vegetable-price-on-28-august-2025-skyrocketing-rates-after-heavy-rain

গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণে কার্যত নাকাল গোটা রাজ্য। সকাল-সন্ধ্যা থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শুধু যে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে তা নয়, বরং তার বড়সড় প্রভাব পড়েছে রাজ্যের সবজি বাজারেও। এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য চরম ভোগান্তি ডেকে এনেছে। কারণ, লাগাতার বৃষ্টির জেরে জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে, বহু জায়গায় ফসল নষ্ট হয়েছে, আর তার জেরেই সবজির দাম আকাশছোঁয়া।

বাজারে সবজির দাম কত?

   

কলকাতা ও আশপাশের বাজারগুলিতে প্রতিদিন নতুন নতুন হারে দাম বাড়ছে। বর্তমানে পটল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০–৯০ টাকা দরে। ঝিঙের দাম ৯০–১০০ টাকা। করলা ৮০–৮৫ টাকা কেজি, বেগুন ৭০–৮০ টাকা। কাঁচা লঙ্কার দাম পৌঁছে গিয়েছে ২০০ টাকায়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনকি বর্ষাকালে সাধারণত সস্তা থাকে যে সব সবজি—যেমন কুমড়ো, কচু বা উচ্ছে—সেগুলির দামও ঊর্ধ্বমুখী।

একজন ক্রেতার কথায়, “এক কিলো বেগুন কিনতেই ৮০ টাকা লাগছে। আগের মতো আর ২–৩ রকম সবজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সংসারের খরচ সামলানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

চাষিদের কী বলছেন?

হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক চাষির অভিযোগ, টানা বৃষ্টির ফলে খেতে জল জমেছে। অনেক জায়গায় বীজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কোথাও আবার সদ্য ফল ধরা গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে যে ফসল উঠছে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম।

একজন চাষি জানান, “গত সপ্তাহে পটল তুলে বাজারে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত জল ও আর্দ্রতার কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদি এই পরিস্থিতি আরও দিন কয়েক চলে, তাহলে তো আমরা ঋণও শোধ করতে পারব না।” ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবহণ ব্যবস্থাতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার রাস্তা কাদায় ভরে গিয়েছে, বহু জায়গা জলমগ্ন। ফলে গ্রাম থেকে শহরে সবজি নিয়ে আসা কার্যত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

পাইকারি বাজারেও সংকট

Advertisements

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে দিনে ১৫–২০ গাড়ি সবজি শহরে আসত, এখন তা নেমে গিয়েছে ৭–৮ গাড়িতে। এর ফলে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, আর চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

একজন পাইকার বলেন, “সরবরাহ কমে গেলে খুচরো বাজারে দাম বাড়বেই। আমাদেরও কিছু করার নেই। ক্রেতাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে বিক্রেতাদের ওপর।”

জনগণের ক্ষোভ

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষোভ চরমে। বাজারে গিয়ে অনেকেই প্রয়োজনীয় সবজি কিনতে পারছেন না। গৃহবধূ থেকে দিনমজুর—সকলেই এই মূল্যবৃদ্ধির চাপে নাজেহাল। একজন গৃহবধূর আক্ষেপ, “এক কেজি সবজি কিনলেই অন্য কিছু কেনার মতো টাকা হাতে থাকে না। অথচ সংসার তো চালাতে হবে।”

সরকারি ভূমিকা ও সম্ভাব্য সমাধান

এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বড় কোনও হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে কৃষি দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপর তারা নজর রাখছেন। পাশাপাশি কৃষকদের সহায়তা করার জন্য কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও চড়া দামের মুখে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে।