পুজোর মরশুম মানেই কলকাতার বাঙালির কাছে শুধু দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, সঙ্গে থাকে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পরিকল্পনা। শহরের রুফটপ রেস্তোরাঁগুলি সেই উৎসবের আনন্দে আলাদা মাত্রা যোগ করে। খোলা আকাশের নিচে বসে সুস্বাদু খাবার উপভোগ করা, সঙ্গে কলকাতার ঝলমলে রাতের দৃশ্য এবং সেলফিতে বন্দি করা মুহূর্ত—সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে রুফটপ রেস্তোরাঁর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তবে গত কয়েক মাস ধরে নিরাপত্তাজনিত কারণে বহু রুফটপ রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। এবার পুজোর আগেই ফের খুলতে চলেছে এই রেস্তোরাঁগুলি, তবে শর্ত মেনে।
বুধবার কলকাতা পুরভবনে রুফটপ ক্যাফে-রেস্তোরাঁ সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বৈঠক শেষে তিনি ঘোষণা করেন, পুরনো রুফটপ রেস্তোরাঁগুলি পুজোর আগে খুলে দেওয়া হবে, তবে মালিকদের কঠোরভাবে মানতে হবে নতুন অগ্নি নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক নিয়ম। তিনি জানান, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত রেস্তোরাঁ মালিকদের লিখিত মুচলেকা দিতে হবে যে তাঁরা এই নিয়মগুলি আগামী তিন মাসের মধ্যে কার্যকর করবেন।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, নন-রেসিডেনশিয়াল বা কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেই রুফটপ রেস্তোরাঁ চালানোর অনুমতি থাকবে। রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংয়ের ছাদে রেস্তোরাঁ চালানো একেবারেই নিষিদ্ধ। বিদ্যমান রুফটপ রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ খালি জায়গা রাখতে হবে যাতে বিপদের সময় মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করা যায়। পাশাপাশি ছাদের রাস্তার দিকের অংশও ফাঁকা রাখতে হবে যাতে জরুরি অবস্থায় বাইরে থেকে ল্যাডার বসিয়ে উদ্ধারকাজ করা সম্ভব হয়।
রেস্তোরাঁয় থাকতে হবে দুটি সিঁড়ি, কোনও সিঁড়ি বন্ধ বা এনক্লোজ করা যাবে না। ছাদের দরজা সবসময় খোলা রাখতে হবে এবং সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবর্তে মাইক্রোওভেন বা ইলেকট্রিক ইনডাকশন চুলা ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “শহরের মানুষের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তাই সমস্ত রেস্তোরাঁ মালিকদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে এবং নিয়ম মেনে চলতে হবে।” এই নির্দেশিকা কার্যকর করার দায়িত্বে থাকবে কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ এবং ফায়ার ব্রিগেড। এই তিনটি সংস্থার অনুমতি না থাকলে কোনও রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেওয়া হবে না।
অতিরিক্তভাবে জানানো হয়েছে, নতুন করে কোনও বিল্ডিংয়ে রুফটপ রেস্তোরাঁর লাইসেন্স দেওয়া হবে না। অর্থাৎ, এবারের দুর্গাপুজোতে কলকাতাবাসীকে পুরনো রুফটপ রেস্তোরাঁর উপরেই ভরসা রাখতে হবে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্ত শহরবাসীর আস্থা আরও বাড়াবে বলে আশা প্রশাসনের।
কলকাতার খাদ্যরসিকদের কাছে দুর্গাপুজোর দিনগুলো বিশেষ। প্যান্ডেল হপিংয়ের পাশাপাশি কাছের মানুষদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া বাঙালির উৎসবের অংশ। এবার রুফটপ রেস্তোরাঁগুলিতে পুজোর মেনু এবং উৎসবের আমেজ উপভোগ করার সুযোগ মিলবে, তবে সবকিছুই হবে কড়া নিরাপত্তার আওতায়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মুচলেকা জমা দেওয়ার পর থেকে তিন মাস সময় দেওয়া হবে রেস্তোরাঁ মালিকদের, যাতে তাঁরা নতুন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে পারেন। নিরাপত্তার এই কঠোর বিধি মেনে চলা রেস্তোরাঁর জন্য যেমন আবশ্যিক, তেমনি এটি গ্রাহকদের জন্যও আরও নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া করার সুযোগ তৈরি করবে।