কলকাতা: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে ঘিরে প্রতিবছরই কলকাতায় জনস্রোতের চেহারা নেয় বিশাল আকার। চারদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন পুজোর উন্মাদনা শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকেই। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়, যানজট এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাপও। এই সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিবছরের মতোই বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের দুর্গাপুজোতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ১০ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। তাঁদের প্রধান দায়িত্ব হবে প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এবারে পরিকল্পনায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে — সিভিক ভলান্টিয়াররা আর ফ্রন্টলাইনে থাকছেন না।
সাধারণত, পুজোর সময় সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় নেমে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এবার তাঁদের সরাসরি নিরাপত্তা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে। যেমন ট্রাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রণ বা অন্যান্য সহায়ক কাজের দায়িত্ব তাঁদের উপর দেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “সিভিক ভলান্টিয়াররা এবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, কিন্তু সরাসরি রাস্তায় নেমে নিরাপত্তার কাজ করবেন না।”
শুধু সাধারণ পুলিশ সদস্যই নয়, পুজোর পাঁচদিন ডেপুটি কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররাও টহলদারিতে থাকবেন। তাঁদের নেতৃত্বে শহরের প্রতিটি ডিভিশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। লালবাজার ইতিমধ্যেই সব থানাকে একাধিক নির্দেশ জারি করেছে। নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি থানায় পর্যাপ্ত পুলিশ রাখতে হবে, যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করতে হবে এবং হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড প্রস্তুত রাখতে হবে।
পাশাপাশি, প্রতিটি ডিসি অফিসে ২৪ ঘণ্টা র্যাফ বাহিনী মোতায়েন থাকবে। পুজোর সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরজুড়ে তৈরি করা হয়েছে ৬০টিরও বেশি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সরাসরি পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হবে। এছাড়া উৎসবের দিনগুলিতে খোলা থাকবে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম, যেখান থেকে শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। পুজোর সময় পুলিশের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
নিরাপত্তার পাশাপাশি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ট্রাফিক পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্যান্ডেল চত্বরের কাছে যানজট নিয়ন্ত্রণ, পার্কিং এলাকা নির্ধারণ এবং দর্শনার্থীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে।
প্রসঙ্গত, অন্যান্য বছর পুজোর সময় এনসিসি ক্যাডেটদের মোতায়েন করা হয়। তবে এবারে তাঁদের ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও পুলিশের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজো যেন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, তার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সব মিলিয়ে, এবারের দুর্গোৎসবকে ঘিরে কলকাতা পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। ১০ হাজার পুলিশকর্মীর নজরদারিতে, বাড়তি প্রযুক্তিগত নজর এবং নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থায় তিলোত্তমার পুজো আনন্দ যেন কোনওভাবেই ব্যাহত না হয়, সেই লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।