আর জি করে রাতের ‘রণক্ষেত্রে’ দাঁড়িয়ে মিডিয়াকেই তুলোধোনা কমিশনারের!

গোটা কলকাতার রাজপথে জনসমুদ্র (R G Kar)। নারী স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে রাত-দখলের ডাকে স্বাধীনতার মধ্যরাত্রে গোটা রাজ্যের পথে সুবিচারের কলরব (R G Kar)। আর…

Kolkata: Binit Goel is the new acting police commissioner of the metropolis

short-samachar

গোটা কলকাতার রাজপথে জনসমুদ্র (R G Kar)। নারী স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে রাত-দখলের ডাকে স্বাধীনতার মধ্যরাত্রে গোটা রাজ্যের পথে সুবিচারের কলরব (R G Kar)। আর তারই মধ্যে কার্যত ঘটনার এপিসেন্টার আর জি করেই (R G Kar) গুন্ডামির তাণ্ডব চলেছে। আর সেই রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কার্যত ঘুরিয়ে সমস্ত দায়ভার এসে চাপলো মিডিয়ার কাঁধে। আর দায় যিনি চাপালেন তিনি যে সে ব্যক্তি নন। তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনের বিনীত গোয়েল।

   

শান্তিপূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যরাত্রে আর জি কর জুড়ে চরম হিংস্রতা এবং তাণ্ডবের ছবি। অভিযোগ যে, বহিরাগত আক্রমণে তান্ডব শুরু হওয়ার মুহূর্তে আর জি করের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশরা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। হসপিটাল চত্বরে ইমারজেন্সি বিভাগ সহ একাধিক বিল্ডিংয়ে কার্যত তান্ডবের ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বহিরাগতরা। ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি এসে উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, তারপরেই অ্যাকটিভ হতে দেখা যায় পুলিশ কর্মীদের।

কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে, কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুলিশ কমিশনার। সংবাদমাধ্যমের ভুল তথ্য পরিবেশনের জন্যই অশান্তির অভিযোগের ইঙ্গিত তাঁর। আর জি করের ঘটনায় তদন্তের প্রথম দিন থেকেই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আদালতেও মুখ পুড়েছে কলকাতা পুলিশের। সেখানেও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন বিচারপতিরা।

‘রাত-দখলের’ স্বাধীনতার রাতে আর জি করে অবাধ ‘গুন্ডামি’র তাণ্ডব!

আর যখন কার্যত তান্ডবক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে আরজি কর, তখনই সিপির মুখেও এই প্রমাণ লোপাটেরই কথা উঠে এল! ক্ষিপ্ত কমিশনার বারবার বললেন, তাঁরা ন্যায় বিচারের জন্য আপ্রাণ লড়াই করছেন। কোনও তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছে না। যদিও স্বাধীনতার মধ্যরাত্রে এই আক্রমণ শুরু হওয়ার পর একাধিক মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হসপিটালে এই তান্ডব আদতে কী কোনও তথ্য প্রমাণ লোপাটের পরিকল্পিত চক্রান্ত? সম্ভবত সেই কারণেই ক্ষুব্ধ সিপির এই বক্তব্য।

অপরদিকে সংবাদমাধ্যমের দিকে কার্যত সরাসরি তোপ দেগেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। মনগড়া তত্ত্বের ভিত্তিতেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে তার ইঙ্গিত। এই প্রসঙ্গে উঠে এলো শুভজিৎ সিনহা মহাপাত্রের কথাও। এই শুভজিতের যে কোনও রকম রাজনৈতিক সংযোগ নেই, একদম সরাসরি তা দাবি করলেন বিনীত গোয়েল। এমনকি শুভজিতের বাবা একজন স্কুল টিচার, রাজনীতির সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই! রাজনৈতিক প্রভাবের কোনো প্রশ্ন উঠছে না, জোর গলায় চেঁচিয়ে দাবি করেন বিনীত।

কলকাতার পুলিশ কমিশনারের গলায় ক্ষোভের পাশাপাশি কাতর নিবেদন। বুধবারের বারবেলাতেই কেস হাত ছাড়া হয়েছে তাঁদের। বর্তমানে আর জি করের খুন ও ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। গোটা রাজ্য এবং দেশে কলকাতা পুলিশের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে। তারই মধ্যে অপরাধীকে আড়াল করার অভিযোগ থেকে শুরু করে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমাজ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়াচ্ছে একের পর এক তত্ত্ব। যা আরও বেকায়দায় ফেলছে কলকাতার পুলিশ প্রশাসনকে।

তারই মধ্যে অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চরম হিংস্রতার তাণ্ডব আর জি করে। যা আরও অনেকটা ব্যাকফুটেই ঠেলে দিল কলকাতার পুলিশ প্রশাসনকে। যে ঘটনাস্থল তদন্তের পরিভাষায় ‘প্লেস অফ অকারেন্স’, সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে চরম ব্যর্থ পুলিশ? এক বাক্যে সেটা স্বীকার করে নিচ্ছে সমস্ত মহল। কিন্তু তারই মধ্যে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। স্মরণাতীত কালের মধ্যে যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে।

‘মেয়েদের রাত দখল’ প্রতিবাদে থাকবে শান্তনুর স্ত্রী-কন্যা

দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার পর আপাতত শান্তি ফিরেছে আর জি কর সংলগ্ন বেলগাছিয়া চত্বরে। পুলিশ কমিশনারের দাবি, কলকাতায় এতগুলি জায়গাতে ‘প্রোটেস্ট’ হয়েছে। একমাত্র এই জায়গা ছাড়া কোথাও কোনো অশান্তির খবর নেই। কমিশনার আরও দাবি করেন, তাণ্ডব থামানোর জন্য তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা এবং লড়াই করেছেন। হঠাৎ করে তাঁরা কোনো চরম পদক্ষেপ যে নিতে পারেন না, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।

কিন্তু এই ক্ষোভ বহিঃপ্রকাশের পিছনে কী লুকিয়ে আছে কোনও হতাশা? বিশেষজ্ঞ মহলের মতে এককালে চরম সুনাম কুড়োনো পুলিশ প্রশাসনের বেহাল দশাতে কার্যত হতাশাই ছড়াচ্ছে কলকাতার পুলিশ মহলে। এক সময় এই কলকাতা পুলিশকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। আর আজ কার্যত নেটিজেনদের একাংশ বিদ্রুপ করে ‘স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড’ বলছেন। বিভিন্ন বিষয়ে আদালতে তুলোধোনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। আরজিকরের কেস ডায়েরি নিয়ে ছত্রে ছত্রে ভুল এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দাবি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

সেই সব কিছুরই সম্মিলিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কথায়? সেই সম্ভাবনা যথেষ্টই বাস্তবসম্মত। একের পর এক অভিযোগের তীরে কোনঠাসা পুলিশ পাল্টা অভিযোগের রাস্তাই বেছে নিল? আরজি করের নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যত ব্যর্থ পুলিশ। আর সেই ব্যর্থতার তাণ্ডবভূমিতে স্বয়ং সেনাপতির মুখে এই কথা কার্যত অজুহাতের মতোই শোনাচ্ছে কলকাতাবাসীদের একাংশের কানে।