কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে পথকুকুরদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা

কলকাতা: দিল্লিতে পথকুকুরদের অপসারণ নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝেই ভিন্ন পথে হাঁটছে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)। শহরের পথকুকুরদের জন্য নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা করতে বিশেষ উদ্যোগ…

Stray dogs Delhi NCR

কলকাতা: দিল্লিতে পথকুকুরদের অপসারণ নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝেই ভিন্ন পথে হাঁটছে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)। শহরের পথকুকুরদের জন্য নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে তারা। প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুরসভা ৪৮৭টি রাস্তা চিহ্নিত করেছে যেখানে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী পথকুকুরদের খাওয়ানো হবে। এই ‘না-মানুষের ক্যান্টিন’ পরিকল্পনার লক্ষ্য, একদিকে পথকুকুরদের খাবারের অভাব মেটানো, অন্যদিকে শহরের নাগরিক ও কুকুরদের মধ্যে অযথা সংঘাত কমানো।

পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ড. রনিতা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডে পাঁচ বছর আগে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী পথকুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী পশুপ্রেমী সংস্থার তথ্য বলছে, এখন সেই সংখ্যা প্রায় তিন লাখের কাছাকাছি। এই বিশাল সংখ্যক প্রাণীর খাবারের ব্যবস্থা করা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

   

এজন্য পুরসভা একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) প্রকাশ করবে। তাতে থাকবে,

সকাল ৭টার আগে ও রাত ৭টার পর নির্দিষ্ট স্থানে খাবার দেওয়া যাবে।

খাবার শেষে স্থানটি পরিষ্কার রাখা বাধ্যতামূলক।

এক এলাকার কুকুরকে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে না, কারণ তাতে কুকুরদের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকে।

পুরসভা স্থানীয় কাউন্সিলর, পশুপ্রেমী এবং বেলগাছিয়া প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবে। ধাপে ধাপে গলির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে যাতে বেশি সংখ্যক কুকুরের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হয়।

Advertisements

পথকুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বীজকরণ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই কাজে যথেষ্ট গাফিলতি দেখা গিয়েছে। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে কতগুলি নির্বীজকরণ হচ্ছে, তার মাসিক তথ্য সরাসরি পুরসভা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত ও নিয়মিতভাবে চালানো হলে পথকুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং তাদের জীবনযাত্রাও উন্নত হবে।

তথ্য বলছে, বছরে প্রায় ১০% পথকুকুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়— হয় রোগভোগে, নয়তো সড়ক দুর্ঘটনায়। এর বাইরে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথকুকুর হত্যা বা নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি কেউ এমন ঘটনা দেখতে পান বা সন্দেহভাজন কাউকে চিহ্নিত করেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহরের সব গলিতে খাবারের ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। কারণ প্রতিটি কুকুরের নিজস্ব এলাকা রয়েছে এবং অন্য এলাকায় গেলে তাদের মধ্যে লড়াই হতে পারে। তাই সহমতের ভিত্তিতেই খাবারের স্থান নির্ধারণ করা হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শুধু পথকুকুরই নয়, শহরের পরিবেশও পরিচ্ছন্ন থাকবে, আর মানুষ ও প্রাণীর সহাবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছেন পশুপ্রেমীরা।

কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগ এখন নজির হিসেবে ধরা হচ্ছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন দেশের অন্যান্য শহরে পথকুকুরদের ঘিরে বিতর্ক চলছে। প্রাণী অধিকার ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই পদক্ষেপ কলকাতাকে দেশের মধ্যে একটি ‘স্ট্রে-ফ্রেন্ডলি সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে।