কলকাতা পুরসভার সমবায় কো-অপারেটিভ নির্বাচনে ‘দাদাগিরি’-র অভিযোগ শাসকের বিরুদ্ধে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের দখলে ২৫ আসন

কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal) মজদুর সমবায় কো-অপারেটিভ (Cooperative) নির্বাচন (Elections) এবার উত্তপ্ত রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’ এবং প্রার্থী না দিতে…

No Budget, No Development: Only Mahakumbh and Ganga Sagar Discussed in KMC

short-samachar

কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal) মজদুর সমবায় কো-অপারেটিভ (Cooperative) নির্বাচন (Elections) এবার উত্তপ্ত রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’ এবং প্রার্থী না দিতে দেওয়ার অভিযোগ (Allegations) উঠেছে। বিরোধী দল বাম ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া হয়েছে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ভয় দেখিয়ে এবং প্রভাব খাটিয়ে বিরোধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) তাদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে, জানাচ্ছে যে, বিরোধী দলগুলো কোনও প্রার্থীই খুঁজে পায়নি।

   

কিছু তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার মজদুর কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ–এর ৩৮টি আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৫টি আসনে (-25-seats) তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। বাকি ১৩টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত এই কো-অপারেটিভ নির্বাচন শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নির্বাচন হিসেবে পরিচিত।

রাজনৈতিক চাপ এবং বিরোধীদের অভিযোগ:
বাম এবং কংগ্রেস নেতারা এই নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের মতে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন অজুহাতে প্রার্থী নির্বাচন করতে বিরোধীদের বাধা দিয়েছে। এই অভিযোগের পেছনে একাধিক উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষত, ২৫টি আসনে যেখানে তৃণমূলের প্রভাবিত কলকাতা পুরসভা মজদুর কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে, সেখানেও নানা অজুহাত তুলে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, তাদের পক্ষ থেকে যে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছিল, তাদের ওপর শাসক দলের পক্ষ থেকে নানা ধরনের চাপ তৈরি করা হয়, যাতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে, বিরোধী দলগুলি প্রার্থী খুঁজে পায়নি এবং সেই কারণে তারা এই অভিযোগ তুলছে। তৃণমূলের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে কোনও প্রভাব বা চাপ সৃষ্টি করা হয়নি এবং এটি বিরোধীদের অজুহাত মাত্র।

সিটু এবং কংগ্রেসের অবস্থা:
এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal) কর্মচারী সংগঠন সিটু এবং কংগ্রেসের ইউনিয়ন কোনো প্রার্থীই দাঁড় করাতে পারেনি। সাধারণত, এই দুটি সংগঠন কলকাতা পুরসভার গুরুত্বপূর্ণ কর্মী সংগঠন হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এবার তারা কোনো প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারায়, রাজনৈতিক মহলে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই ১৩টি আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর পিছনে বাম ও কংগ্রেসের সাহায্য রয়েছে। তবে বিরোধী দলগুলো তৃণমূলের এই দাবি অস্বীকার করে তাদের প্রার্থী দিতে না পারার জন্য শাসক দলের ওপর আক্রমণ শানিয়েছে।

গত নির্বাচন এবং বর্তমান পরিস্থিতি:
পাঁচ বছর আগে, ২০১৯ সালের সমবায় কো-অপারেটিভ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৮টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। এবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে শাসক দলের প্রভাব এবং দখল আরও বেড়েছে। তাদের মতে, যদি তৃণমূলের দখল কেবল সাংগঠনিকভাবে বেড়ে থাকে, তবে তা প্রমাণ করে যে, বিরোধীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অপারগ হয়ে পড়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের ক্ষমতা ও প্রভাব শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কো-অপারেটিভ নির্বাচনে, যেখানে তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে বিরোধীদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বহিষ্কার করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা মনে করছে, রাজ্য রাজনীতির এই ধরন আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিকized এবং কঠিন হয়ে উঠছে।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া:
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে, তারা কোনো ধরনের প্রভাব খাটায়নি, এবং বিরোধী দলগুলি সঠিকভাবে প্রার্থী খুঁজে পায়নি। তাদের মতে, নির্বাচনের প্রচলিত নিয়মে কোনো ধরনের অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, এটি একটি সাধারণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া, এবং তারা সেই প্রক্রিয়াতেই অংশগ্রহণ করছে।

তৃণমূলের নেতা দাবি করেন, বিরোধী দলগুলি তাদের নিজেদের ব্যর্থতা এবং অভ্যন্তরীণ সংগঠনগত দুর্বলতার জন্য নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারেনি। তাদের ভাষায়, ‘‘এটাই বিরোধীদের দুঃখজনক অজুহাত, তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এসব অভিযোগ তুলছে।’’

কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal) মজদুর সমবায় কো-অপারেটিভ নির্বাচনে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা একদিকে যেমন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা সৃষ্টির কারণ হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী এবং শাসক দলের মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষ ও সমালোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের ফলাফল কী হয়, তা এখন দেখার বিষয়, তবে রাজনীতির এই ‘দাদাগিরি’ নিয়ে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তা অবশ্যই কলকাতার রাজনৈতিক আবহাওয়ায় নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে।