কলকাতা: নিত্যযাত্রীদের জন্য গর্বের ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ ব্যবস্থা কলকাতা মেট্রো (Kolkata Metro)। সেই মেট্রোর এক কামরার দরজায় অদ্ভুত চিহ্ন এঁকে দিলেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। যা ধরা পড়েছে মেট্রোর সিসিটিভি ফুটেজে। কবি সুভাষ-দক্ষিণেশ্বর মেট্রো রুটে। এখন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এসে মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।
ঘটনার দিন, ট্রেনটি ছিল তুলনামূলকভাবে ফাঁকা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, নীল শার্ট পরা এক ব্যক্তি, যার কাঁধে একটি ব্যাগ ঝোলানো ছিল, হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়ে একের পর এক দরজায় ‘ক্রস’ চিহ্ন আঁকছেন। চিহ্নগুলি সম্ভবত স্প্রে পেইন্ট দিয়ে করা। এক রেকের প্রায় সমস্ত গেটেই একই ধরনের দাগ দেখা যায়।
এই ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে—এত নিরাপত্তা, এত নজরদারির পরেও কীভাবে একজন ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করতে পারেন, তাও দিনের আলোয়? আরও আশ্চর্যের বিষয়, এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনা সম্পূর্ণভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার শামিল। IPC-র অধীনে এই ধরনের কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ। একজন যাত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ওই ব্যক্তি কে, কেন এই কাজ করলেন, তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল—তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো ধরনের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা বিদ্বেষমূলক বার্তার ইঙ্গিত নেই। তাই উদ্দেশ্য নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে।”
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে বড় বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে। মেট্রো পরিষেবার মতো স্পর্শকাতর জায়গায় যদি কেউ এভাবে অবাধে ঢুকে ক্ষতি করতে পারেন, তা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতেও পারে। ফলে নজরদারি আরও জোরদার করা উচিত।
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, অতিরিক্ত সিসিটিভি বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে এবং স্টেশনে ও ট্রেনে মোবাইল স্ক্যানিং দলকে আরও সক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলছে।
এক যাত্রী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের যাত্রার নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। একজন যদি স্প্রে নিয়ে ঘুরতে পারেন, তা হলে কেউ বিস্ফোরক নিয়েও ঢুকতে পারেন না কেন?”
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, পুলিশ শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি চেক করে, অভিযুক্ত কোন স্টেশন থেকে উঠেছেন বা কোথায় নেমেছেন, তার খোঁজ করছে। এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থায় শুধু প্রযুক্তির উপর ভরসা রেখে নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব নয়। প্রয়োজন আরও মানবিক নজরদারি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো সিস্টেম গড়ে তোলা।