অফিস টাইমে টিকিট কাউন্টার কম থাকায় বিপাকে মেট্রো যাত্রীরা

কলকাতায় মেট্রো(Kolkata Metro) যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে অফিস যাত্রীদের জন্য। কিন্তু বর্তমানে শহরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে টিকিট কাউন্টার কমে যাওয়ায় যাত্রীদের…

Kolkata Metro

কলকাতায় মেট্রো(Kolkata Metro) যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে অফিস যাত্রীদের জন্য। কিন্তু বর্তমানে শহরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে টিকিট কাউন্টার কমে যাওয়ায় যাত্রীদের যাত্রা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত কষ্টকর। বিশেষ করে, টিকিট কাটার জন্য দীর্ঘ লাইনগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকর ফলে যাত্রীরা একের পর এক ট্রেন মিস করছে এবং এ কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।

Advertisements

সম্প্রতি বেশিরভাগ মেট্রো স্টেশনে কার্যকরী টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ স্টেশনেই মাত্র একটি কাউন্টার খোলা থাকে, আর কিছু ব্যস্ত স্টেশনে দু’টি কাউন্টার খোলা থাকে।এর আগে যেমন এসপ্লানেড, দমদম এবং কালীঘাটের মতো স্টেশনগুলোতে দিনে পাঁচ-ছ’টি কাউন্টার খোলা থাকত, সেগুলো এখন অনেকটা বন্ধ থাকছে। ফলে যাত্রীদের টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যা একাধিক ট্রেন মিস করার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

   

এছাড়া জোকা-মাঝেরহাট এবং নিউ গড়িয়া-রুবি লাইনের বেশ কিছু স্টেশনকে ‘নো বুকিং কাউন্টার’ স্টেশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে কবি সুভাষ এবং দক্ষিণেশ্বর স্টেশনগুলিতে অধিকাংশ সময় মাত্র একটি বা দুটি কাউন্টার খোলা থাকে। এর ফলস্বরূপ যাত্রীদের দেরি হচ্ছে এবং দিনের পর দিন একই সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের টিকিট কাটার জন্য স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহার বা স্মার্ট কার্ড রিচার্জের জন্য মেট্রো অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের সংখ্যা বেড়েছে, তারপরও প্রায় ৫০% যাত্রী এখনও পেপার টিকিট কেনার দিকে বেশি আগ্রহী। তাদের মধ্যে অনেকেই মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন টিকিটিং ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নয়, ফলে তারা বাধ্য হয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন।

এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো কর্মী সংকট। ২০১৮ সালের পর থেকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, অথচ নতুন স্টেশন চালু হয়েছে এবং যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। যেমন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বরানগর এবং দক্ষিণেশ্বর স্টেশনগুলির পাশাপাশি অন্যান্য নতুন স্টেশনও চালু হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগের কাজ হয়নি। এর ফলে, যাত্রীদের চাপ সামলানোর জন্য পুরোনো কর্মী নিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।

কর্মী সংকট বিশেষভাবে সকাল এবং সন্ধ্যায়, যখন যাত্রীদের সংখ্যা বেশি থাকে, তখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনকি দুপুরের সময়েও, যেখানে চাপ কিছুটা কম থাকে, তখনও বেশিরভাগ স্টেশনে একটি মাত্র কাউন্টার খোলা থাকে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানায় যে যাত্রীদের চাপ বাড়লে কাউন্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়, তবে সেটা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, “কর্মী সংকটের কারণে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যাত্রীদের এই ভোগান্তি বাড়ছে, যা তাদের সময় এবং শক্তি নষ্ট করছে।”

কলকাতার মেট্রো সিস্টেম বর্তমানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সেক্ষেত্রে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কর্মী নিয়োগ এবং টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে যাত্রীদের এই দৈনন্দিন ভোগান্তি চলতে থাকবে এবং মেট্রো যাত্রা আরও জটিল হয়ে উঠবে।