কলকাতা মেট্রো বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের টেন্ডার বাতিল

কলকাতা মেট্রো(Kolkata Metro) সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা থেকে চালক নিয়োগের জন্য যে টেন্ডার আহ্বান করেছিল, তা বাতিল করেছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও কর্মীদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই…

Kolkata Metro

কলকাতা মেট্রো(Kolkata Metro) সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা থেকে চালক নিয়োগের জন্য যে টেন্ডার আহ্বান করেছিল, তা বাতিল করেছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও কর্মীদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা আর কোনো বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করবে না। কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণ এবং চালকের অভাবের মাঝে এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রুটের জন্য বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ট্রেন অপারেটর নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এই ঘোষণা করা হয়েছিল টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে। তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিবাদ শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং মেট্রোর কর্মীরা এতে বিরোধিতা জানায়। ফলে চাপের মুখে মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাদের এই পরিকল্পনা থেকে পিছু হটে টেন্ডার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

   

কলকাতা মেট্রো চালকের সংকটের মুখে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে অন্তত ১৩ জন মেট্রোচালক অবসর নেওয়ার কথা আছে যা পরিস্থিতি আরও জটিল করবে। বর্তমানে কলকাতা মেট্রো উত্তর-দক্ষিণ, ইস্ট-ওয়েস্ট, জোকা-মাঝেরহাট, নিউ গড়িয়া-রুবি রুটে পরিষেবা চালাচ্ছে, পাশাপাশি নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর রুটে পরিষেবা শুরু হতে পারে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে চলেছে, যা ২০২৩ সালের শেষেই চালু হওয়ার কথা।

এভাবে নতুন রুট যুক্ত হলে, মেট্রোর চালকদের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে এই সংকটের সমাধানে মেট্রো কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে ২৫ জন চালক নিয়োগ করতে পেরেছে এবং তারা বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়া, মেট্রোর ইয়ার্ডে ট্রেন শান্টিংয়ের কাজে নিযুক্ত কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালক হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু এই পদক্ষেপগুলি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে হচ্ছে, তাই বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন রুটগুলিতে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম এবং রেডিও-সঙ্কেত নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, যার ফলে চালকদের ভূমিকা কমে যাবে। ট্রেন চলাচল স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রিত হবে। এই ব্যবস্থায় চালকদের দায়িত্ব থাকবে না, ফলে নতুন কর্মী হিসেবে “ট্রেন অপারেটর কাম স্টেশন কন্ট্রোলার” নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল।

Advertisements

এমন পরিস্থিতিতে, শ্রমিক সংগঠনের নেতা শুভাশিস সেনগুপ্ত প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম ব্যর্থ হয়, তাহলে ট্রেন অপারেটররা কীভাবে ট্রেন চালাবেন? আমরা এই প্রশ্ন আগেই তুলেছিলাম।” এই প্রশ্নটি আধুনিক প্রযুক্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতার বিরুদ্ধে একটি সতর্কতা স্বরূপ। শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কখনও কখনও বিপদের কারণ হতে পারে।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাতিলের ফলে কলকাতা মেট্রোর কর্মী নিয়োগ এবং পরিচালনার কৌশল নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠছে। যদিও আধুনিক প্রযুক্তি মেট্রো সেবা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে, তবে এই প্রযুক্তির অপ্রত্যাশিত ত্রুটির জন্য মানব সম্পদের প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। মেট্রো কর্তৃপক্ষের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে চালক সংকট মোকাবিলা করা, যা আগামী বছরগুলিতে আরও কঠিন হতে পারে।