দেশজুড়ে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস পালনের (Independence Day Celebration) প্রস্তুতি তুঙ্গে। আগামী শুক্রবার ভোর থেকেই শুরু হবে পতাকা উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কুচকাওয়াজ। আর এই বিশেষ দিনকে ঘিরে কলকাতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন পদক্ষেপ। শহরের প্রাণকেন্দ্র রেড রোড এবং সংলগ্ন এলাকায় কঠোর নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার।
কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, এ বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রেড রোডের প্যারেড গ্রাউন্ড এবং চারপাশের অঞ্চলকে মোট ১৩টি নিরাপত্তা জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকবেন একজন করে ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পদমর্যাদার অফিসার। তাঁদের অধীনে একাধিক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি)-এর নেতৃত্বে থাকবেন বিপুল সংখ্যক পুলিশকর্মী।
শুধুমাত্র এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই প্রায় ৫,০০০-এর বেশি অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকবেন পাঁচজন যুগ্ম কমিশনার, ২০ জন ডেপুটি কমিশনার এবং বিভিন্ন থানার ওসি-রা। এছাড়া রেড রোডের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকবে বিশেষ প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী, যা যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।
দুই জায়গায় থাকবে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) যাতে দ্রুত কোনও হুমকি বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। পাশাপাশি, মোট ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে সমগ্র প্যারেড ও তার আশপাশের এলাকা নজরে রাখা হবে।
আকাশপথেও থাকবে কড়া নজর। ড্রোনের মাধ্যমে রেড রোড এবং সংলগ্ন এলাকা ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া মোটরসাইকেল টহলদারি টিম এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের গোয়েন্দারা মাটির কাছাকাছি থেকে নজরদারি চালাবে। এই নজরদারি চলবে শুধু অনুষ্ঠানের দিন নয়, তার আগের রাত থেকেই।
সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে রেড রোডের কাছে ১২টি পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে বালির বাঙ্কার। এগুলি ব্যবহার হবে সন্দেহজনক যানবাহন বা ব্যক্তিকে আটকাতে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া শহরের হোটেল, অতিথি শালা, বাজার, শপিং মল, মেট্রো স্টেশন এবং রেলস্টেশনের বাইরে বিশেষ তল্লাশির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতায় ঢোকা এবং বেরনোর প্রতিটি পয়েন্টে থাকবে অতিরিক্ত ওসি-র নেতৃত্বে পুলিশ টিম। এই সমস্ত জায়গায় চলবে গাড়ি ও যাত্রীদের কড়া তল্লাশি। বিশেষত, রাজ্যের বাইরে থেকে আগত গাড়ি এবং লাগেজের উপর থাকবে বাড়তি নজর।
লালবাজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পুলিশ সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে নাগরিকদের সহযোগিতাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কোনও সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই বাড়তি নিরাপত্তা শুধু কলকাতায় নয়, গোটা রাজ্যজুড়েই জারি থাকবে। জেলার বিভিন্ন শহরেও বিশেষ চেকপোস্ট, টহলদারি ও নজরদারি চালানো হবে। প্রশাসনের আশা, কঠোর নিরাপত্তা বলয় এবং সকলে সতর্ক থাকলে এ বছরের স্বাধীনতা দিবস হবে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ।