কলকাতা: কলকাতা ও তার শহরতলিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি শহরকে কার্যত জলমগ্ন করেছে। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টি মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহরের বিভিন্ন অংশে ২৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯৭৮ সালের পর সবচেয়ে বেশি। শহরের রাস্তা, বাজার ও প্যান্ডেলগুলোতে জল জমে সাধারণ মানুষের চলাচল দুর্ভোগে পড়েছে।
প্রতি বছরের মতো মহালয়া ও প্রথমা তিথিতে কলকাতার বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তবে আজ মঙ্গলবার, দ্বিতীয়ীতে, রেকর্ড বৃষ্টির কারণে শহরের একাধিক বড় পুজোর উদ্বোধন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শহরের জনপ্রিয় পুজো এবং সরকারি আনুষ্ঠানিকতার সব উদ্বোধন আপাতত বাতিল করা হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে শহরের রাস্তা ও প্যান্ডেল জলে তলিয়ে যাওয়ায় পুজোর উদ্যোক্তারা চরম সমস্যায় পড়েছেন। অনেক প্যান্ডেলে পানি ঢুকে গেছে এবং শেষ মুহূর্তে উদ্যোগকারীরা কৌশল খুঁজছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। মুখ্যমন্ত্রী সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী একই সঙ্গে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলোতে আজ, মঙ্গলবার থেকে ছুটি ঘোষণা করেছেন। তিনি এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমি শিক্ষাদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি আজ থেকে সমস্ত সরকারি স্কুল বন্ধ রাখতে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্কুলগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়, তবুও আমি তাদের কাছে অনুরোধ করেছি দু’দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হোক। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ক্লাস থাকে, সেগুলো যেন অনলাইনে হয়, কোভিডের সময়ের মতো।”
শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দু’দিন “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” করারও অনুরোধ করেছেন। তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, “অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হবেন না। নিরাপদ থাকাই এখন প্রধান।”
নবান্নে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে এবং সেখানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নাগরিকরা যেকোনো সমস্যা সরাসরি কন্ট্রোলরুমে জানাতে পারবেন। প্রশাসন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং জরুরি পরিষেবা সচল রাখা হচ্ছে।
রাজ্যের পুলিশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে জরুরি সহায়তা প্রদান করছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ, জলনিরোধ, রাস্তা-সড়ক ও প্যান্ডেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের ফলে বিপর্যয় পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হচ্ছে।
শহরের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রমাণ করছে যে, আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত আক্রমণ মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কতটা জরুরি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সকলকে বাড়ি থেকে বের হওয়া এড়াতে বলা হয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
