বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির ভাবনা, নজিরবিহীন পদক্ষেপে কমিশন

হাতে আর ক’টা মাস। রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দফতরে চলছে জোরকদমে কাজ। বুথ তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে ভোটকর্মী নিয়োগ,…

TMC's Lead Expands in Eighth Round in Kaliganj, What Does the By-election Trend Indicate?

হাতে আর ক’টা মাস। রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দফতরে চলছে জোরকদমে কাজ। বুথ তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে ভোটকর্মী নিয়োগ, ভোটার তালিকার হালফিল সংস্করণ— সব দিকেই কষাকষি শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisements

এদিকে কমিশনের তরফে এবার সামনে এল এক অভিনব ভাবনা। সূত্রের খবর, এবার ভোটের বুথ হতে পারে বহুতলেও! অর্থাৎ যেখানে ঘনবসতি বেশি, যেখানে মানুষের যাতায়াত বা বুথে পৌঁছনোর সুবিধা তুলনামূলক কম, সেই সব জায়গায় বহুতল আবাসনের ভিতরে বা আশেপাশে তৈরি হতে পারে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। কমিশনের মতে, ভোটদানের হার বাড়াতে এবং ভোটারদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এমন উদ্যোগ।

   

কেন বহুতলে বুথ?

প্রতিবার ভোট এলে একটা বড় সমস্যা দেখা দেয়— অনেক ভোটার বুথে আসতে পারেন না শুধুমাত্র দূরত্ব বা অসুবিধাজনক অবস্থানের কারণে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেখানে বহুতল আবাসন গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মানুষের জন্য, সেখানে বুথে পৌঁছতে অনেক সময় লম্বা লাইন, যানজট বা দূরত্বের কারণে মানুষ ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। সেই জায়গাতেই এবার কমিশনের নতুন চিন্তা— বুথ যদি বহুতলের মধ্যেই তৈরি হয়, তবে সেখানকার বাসিন্দাদের বুথে যাওয়া আরও সহজ হয়ে যাবে। ফলে ভোটদানের হারও স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে পারে।

কমিশনের উদ্দেশ্য

নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য একটাই— যত বেশি সম্ভব ভোটার যাতে ভোট দিতে পারেন। গণতন্ত্রের মূল শক্তি এই ভোটদান প্রক্রিয়া। কিন্তু যদি কোনও কারণে ভোটদানের হার কমে যায়, তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই কারণেই নতুন ভোটের বুথ তৈরির ক্ষেত্রে কমিশন এবার ভোটারদের আরাম-আয়েশ, যাতায়াতের সুবিধা ও নিরাপত্তা— এই তিনটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে এলাকায় বহুতল সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই বুথ তৈরি হলে ভোটের চিত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত যুব সমাজ ও প্রবীণ ভোটাররা যারা বুথে পৌঁছতে সমস্যায় পড়েন, তারা অনেকটাই উপকৃত হবেন। আবার বহুতল আবাসনে সাধারণত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। তাই নিরাপত্তার দিক থেকেও এই উদ্যোগ বেশ কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

কী কী চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে?

তবে সব বিষয়ই এতটা সহজ নয়। বহুতলে বুথ তৈরি করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন আবাসন কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দাদের সম্মতি। সবার সম্মতি না থাকলে সেখানে বুথ তৈরি করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, বহুতলের ভিতরে অবাধে ভোটারদের প্রবেশাধিকার দিতে গেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করতে হবে। এছাড়া, ভোটের দিনে বহুতল আবাসনে বহিরাগত ভোটারদের প্রবেশে বাসিন্দাদেরও কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে। এই বিষয়গুলো কমিশনকে খুঁটিয়ে ভেবে দেখতে হবে।

রাজ্যের প্রতিক্রিয়া

কমিশনের এই ভাবনা ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটদানের হার বাড়ানো একান্ত জরুরি। তবে তার জন্য নতুন এই উদ্যোগ কার্যকর হবে কি না, তা সময়ই বলবে। বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, এভাবে বুথ তৈরির ক্ষেত্রে যেন কোনও পক্ষপাতিত্ব বা অস্বচ্ছতা না থাকে, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে, গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক নতুন দিশা। বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে বহু ভোটারকে বুথে আনতে কমিশন সফল হতে পারে। যদিও চ্যালেঞ্জও কম নয়। কিন্তু ভোটারদের সুবিধা যদি অগ্রাধিকার পায়, তবে এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এক নতুন অধ্যায় লিখতে পারে।