সিসিটিভি বসানোয় দেরি কেন? হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে (CCTV) নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন উঠছে। পড়ুয়া থেকে অধ্যাপক, অনেকেই বারবার জানিয়েছেন— বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বাইরের লোকজনের অবাধ যাতায়াত, ছাত্রাবাস সংলগ্ন…

Calcutta High Court Says Financial Contribution by Earning Wife Not Cruelty

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে (CCTV) নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন উঠছে। পড়ুয়া থেকে অধ্যাপক, অনেকেই বারবার জানিয়েছেন— বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বাইরের লোকজনের অবাধ যাতায়াত, ছাত্রাবাস সংলগ্ন এলাকায় নজরদারির অভাব, এমনকি নেশা ও অসামাজিক কার্যকলাপের মতো সমস্যাগুলি নিয়ে তাঁদের আশঙ্কা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা, এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি), কয়েক মাস আগে সিদ্ধান্ত নেয় যে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরা বসানো প্রয়োজন।

Advertisements

ইসি-র প্রস্তাব অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি জায়গায় মোট ৭০টি সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরা বসানো হবে। ছাত্রাবাস, প্রধান গেট, বিভিন্ন একাডেমিক বিল্ডিং, লাইব্রেরি এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে যেসব জায়গায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা বেশি হয়, সেইসব স্থানে এই ক্যামেরা বসানো হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই শক্তিশালী হবে বলে আশা করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।

   

তবে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সংস্থানই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের কাছে ৬৮ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে চেয়ে আবেদন জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, এই অর্থ ছাড়া প্রকল্প চালু করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে ওই অর্থ মঞ্জুর করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

এই প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টে বিষয়টি ওঠে আসে। মঙ্গলবার বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন যে, সিসিটিভি বসানোর জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে টাকা রাজ্যের কাছে চেয়েছে, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানাতে হবে। অর্থাৎ রাজ্য সরকার প্রকল্পের জন্য ৬৮ লক্ষ টাকা দেবে কি না, তা স্পষ্ট করে জানাতে হবে।

আদালতের এই নির্দেশ স্বাভাবিকভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বারবার যে নিরাপত্তা ভাঙনের অভিযোগ উঠছে, তাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই ঘটনায় নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি আরও জোরালোভাবে সামনে আসে। সমাজের বিভিন্ন মহল, এমনকি ছাত্রছাত্রীদের একাংশও দাবি করে, ক্যাম্পাসে কড়া নজরদারি চালানো হোক।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ আবার মনে করছে, অতিরিক্ত সিসিটিভি(CCTV) নজরদারি পড়ুয়াদের স্বাধীনতার পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্র, সেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ নজরবন্দি হলে পড়ুয়ারা অস্বস্তি বোধ করতে পারে। তবে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাই মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাই মুখ্য, তাই প্রযুক্তিগত নজরদারি চালু করা ছাড়া উপায় নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, যদি রাজ্য সরকার দ্রুত আর্থিক সাহায্য করে, তাহলে ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসানোর কাজ কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু করা যাবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি ক্যামেরার সঙ্গে একটি আধুনিক কন্ট্রোল রুম থাকবে, যেখানে রেকর্ডিং সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে যে কোনও ঘটনার দ্রুত তদন্ত সম্ভব হবে।

আদালতের নির্দেশের পর এখন সবার দৃষ্টি রাজ্যের উপর। ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের তরফে কী সিদ্ধান্ত জানানো হয়, সেটাই নির্ধারণ করবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোন পথে এগোবে। রাজ্য যদি প্রয়োজনীয় টাকা মঞ্জুর করে, তবে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রে এটি হবে একটি বড় পদক্ষেপ। কিন্তু যদি অর্থ বরাদ্দ আটকে যায়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে বিকল্প ব্যবস্থা করবে, সেটাই হবে বড় প্রশ্ন।

সব মিলিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ইস্যুতে কলকাতা হাই কোর্টের এই হস্তক্ষেপ নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন রাজ্যের সিদ্ধান্তই জানাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পথে আর কতটা এগোনো যাবে।