অনুদানের শর্তে মোদির ছবি, উত্তাল কলকাতার দুর্গাপুজো

কলকাতা: পুজোর মরশুমে ফের রাজনীতির রঙ গাঢ় হচ্ছে রাজ্যে। দুর্গাপুজোর (Kolkata Durga Puja) অনুদানকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াল বিজেপি। সূত্রের খবর, কলকাতার…

অনুদানের শর্তে মোদির ছবি, উত্তাল কলকাতার দুর্গাপুজো

কলকাতা: পুজোর মরশুমে ফের রাজনীতির রঙ গাঢ় হচ্ছে রাজ্যে। দুর্গাপুজোর (Kolkata Durga Puja) অনুদানকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াল বিজেপি। সূত্রের খবর, কলকাতার একাধিক ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। তবে সেই অনুদানের শর্ত শুনে বিস্মিত ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে সাধারণ মানুষ। জানা যাচ্ছে, যে ক্লাব অনুদান নেবে, তাদের মণ্ডপের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি রাখতে হবে।

এই খবর সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, বিজেপি দুর্গাপুজোর মতো আবেগঘন সামাজিক উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তাদের দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অনুদান দেন, সেটি রাজ্য সরকারের উদ্যোগ। কিন্তু বিজেপি সরাসরি রাজনৈতিক স্বার্থে ক্লাবগুলিকে শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।”

   

সূত্র অনুযায়ী, অনুদান বণ্টনের জন্য ইতিমধ্যেই বিজেপির তরফে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এই কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে। ক্লাবভেদে কত টাকা অনুদান দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরাই। তবে শর্তটি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে শহর জুড়ে।

বিজেপির তরফে অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের এক নেতা জানিয়েছেন, “এতে ভুল কোথায়? সরকার টাকা দিলে যদি পুজো কমিটির ব্যানারে মমতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকে, তাহলে বিজেপি টাকা দিলে মোদির ছবি রাখতে অসুবিধা কেন হবে?”

উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই দুর্গাপুজোর আগে কলকাতা এবং জেলার একাধিক ক্লাবকে অনুদান দিয়ে আসছেন। অনুদানের অঙ্কও প্রতি বছর বেড়েছে। অনেক ক্লাবের ক্ষেত্রেই এই অর্থসাহায্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল এই অনুদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রচার চালায়। তবে এবার বিজেপি নিজেরাই সেই একই পথে হাঁটায় প্রশ্ন উঠেছে—পার্থক্যটা কোথায়?

Advertisements

সাধারণ মানুষ এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, দুর্গাপুজো বাংলা সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব, যা মানুষের মিলনের প্রতীক। সেখানে রাজনীতির শর্ত আরোপ করা একেবারেই উচিত নয়। কেউ কেউ বলছেন, “উৎসব মানে আনন্দ। সেখানে রাজনৈতিক প্রতীকের জোরাজুরি মানা যায় না।”

তৃণমূলের কটাক্ষ, “বাংলার মানুষকে নিজেদের পক্ষে টানতে না পেরে বিজেপি এখন পুজো মণ্ডপের দোরগোড়ায় রাজনীতি ঢুকিয়ে দিতে চাইছে।” অন্যদিকে বিজেপি পাল্টা সওয়াল ছুড়ে দিয়েছে, “যখন মমতা অনুদান দেন, তখন কি তাঁর ছবি দেখানো হয় না?”

সব মিলিয়ে, দুর্গাপুজোর অনুদানকে ঘিরে বিজেপি বনাম তৃণমূল দ্বন্দ্বে ফের একবার রাজনীতির আঁচ পৌঁছল মণ্ডপে। উৎসবের আবহে রাজনৈতিক টানাপড়েন কতটা প্রভাব ফেলবে, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।