বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে মহিমা বাড়ল কলকাতার দুর্গোৎসবের

শারদীয়া দুর্গোৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তেই উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ। শহরের নানা প্রান্তে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী বন্ধু-পরিবার নিয়ে মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন দেবী দর্শনের আশায়। UNESCO…

kolkata-durga-puja-foreign-diplomats-2025

শারদীয়া দুর্গোৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তেই উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ। শহরের নানা প্রান্তে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী বন্ধু-পরিবার নিয়ে মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন দেবী দর্শনের আশায়। UNESCO কর্তৃক স্বীকৃত এই দুর্গোৎসবকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম উৎসব’ বলে উল্লেখ করেছেন চালতাবাগান লোহাপট্টি দুর্গাপূজা কমিটির চেয়ারম্যান সুন্দীপ ভূতোরিয়া।
শনিবার আনন্দবাজার সংবাদ সংস্থার (ANI) সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভূতোরিয়া বলেন, “দুর্গোৎসবের তাৎপর্য অনন্য। এটি শুধুমাত্র বাঙালির উৎসব নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক সম্পদ। ইউনেস্কো এই উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এখানে এসে উৎসবে যোগ দিয়েছেন।”

Advertisements

শিল্প, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন:
এ বছর নানা শিল্পকলা-সমৃদ্ধ থিমে ভরপুর শহরের দুর্গাপুজো। এর মধ্যে বিশেষভাবে সাড়া ফেলেছে ত্রিধারা আকালবোধনের থিম “চলো ফিরি”। এই থিম যেন প্রতীকী ভ্রমণ, যেখানে মানুষ ফিরে যাচ্ছে শিল্প, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার আদি উৎসে।

   

মণ্ডপজুড়ে প্রাচীন গুহাচিত্রের প্রতিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রস্তরযুগের মানুষ কীভাবে প্রকৃতি, দেবত্ব এবং জীবনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন—তা দেয়ালে আঁকা প্রতীক, ছবি ও খোদাইয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিশে গেছে বেদীয় মন্ত্র ও শ্লোক, যা আধ্যাত্মিক আবহকে আরও গভীর করেছে।
মণ্ডপের কেন্দ্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহাজাগতিক চক্র—সৃষ্টি, পালন ও সংহার। এখানে শিব, বিষ্ণু ও কালী দেবীর চিরন্তন বন্ধনই প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেবী দুর্গার আগমনে সেই চক্র সম্পূর্ণ হয়ে উঠছে, যা মানবসভ্যতার আদি বিশ্বাসকেও পুনরুজ্জীবিত করছে।

উৎসবের তাৎপর্য ও বিশ্বাস:
দুর্গাপুজো বা দুর্গোৎসবকে শারদোৎসব নামেও ডাকা হয়। এটি মা দুর্গার মহিষাসুরবধের স্মৃতি বহন করে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, আশ্বিন মাসের এই সময় দেবী দুর্গা তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করতে স্বর্গলোক থেকে নেমে আসেন। বাঙালির কাছে এটি কেবল দেবী আরাধনা নয়, বরং এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, যেখানে শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য ও সমবেত আনন্দের প্রকাশ ঘটে।

শহরের প্রতিটি মণ্ডপে ভিড় জমছে—কারও হাতে ক্যামেরা, কারও হাতে প্রসাদ, আবার কারও চোখে শুধুই দেবী দর্শনের আনন্দ। ছোট-বড় সবাই সমান উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। পাড়ার পুজো থেকে শুরু করে বড় থিম মণ্ডপ—সবখানেই সমান উৎসাহ।

আন্তর্জাতিক মহলে দুর্গোৎসবের বার্তা:
কয়েক বছর ধরেই কলকাতার দুর্গোৎসব আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। বিদেশি কূটনীতিক থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এই উৎসবে অংশ নিতে আসছেন। এভাবেই দুর্গোৎসব কেবল বাংলার নয়, বরং বিশ্বের এক ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে।

দেবী দুর্গার আগমনে যেমন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে, তেমনই এই উৎসব মানুষের মধ্যে একতা, শক্তি ও আশার বার্তা দেয়। শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়ে দুর্গোৎসব আজ সত্যিই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।


❓ FAQs

Q1. এ বছর কলকাতার দুর্গোৎসবে কী বিশেষত্ব দেখা গেছে?
👉 বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতি এবং ইউনেস্কো স্বীকৃতির কারণে উৎসবটি আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে।

Q2. চাতলাবাগান লোহাপট্টি দুর্গাপুজো কমিটির বক্তব্য কী?
👉 চেয়ারম্যান সুন্দীপ ভূতোরিয়া বলেছেন, “দুর্গোৎসব বিশ্বের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক উৎসব।”

Q3. এ বছরের কোন থিম বিশেষভাবে সাড়া ফেলেছে?
👉 ত্রিধারা আকালবোধনের “চলো ফিরি” থিম, যেখানে প্রাচীন গুহাচিত্র ও আধ্যাত্মিক প্রতীক তুলে ধরা হয়েছে।

Q4. দুর্গোৎসবকে কেন ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে?
👉 শিল্প, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য সমন্বয়ের জন্য কলকাতার দুর্গোৎসব বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

Q5. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্গোৎসবের গুরুত্ব কী?
👉 বিদেশি কূটনীতিক ও পর্যটকদের অংশগ্রহণের ফলে এটি কেবল বাংলার উৎসব নয়, বরং বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।


🔑 Kolkata Durga Puja UNESCO, Durga Puja 2025 themes, Kolkata puja foreign guests, Chaltabagan Durga Puja, Tridhara Akalbodhan Cholo Firi