দুর্গাপুজোয় থার্মোকল-প্লাস্টিক সাজসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা মহানগরে

পশ্চিমবঙ্গ প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (Durga Puja)-এর নির্দেশ মেনে কলকাতা পুলিশ সম্প্রতি কুমোরটুলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূর্তিকারদের থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছে। এই পদক্ষেপের…

Durga Puja new rules

পশ্চিমবঙ্গ প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (Durga Puja)-এর নির্দেশ মেনে কলকাতা পুলিশ সম্প্রতি কুমোরটুলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূর্তিকারদের থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুর্গাপূজার ঠিক আগে মূর্তিকারদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে এবং তাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

যদিও ২০২২ সালে থার্মোকল এবং প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে মূর্তি সাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তবে এই নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। এবার পুলিশের হঠাৎ তৎপরতা মূর্তিকারদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   

কুমোরটুলি কুম্ভকার সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল জানিয়েছেন, ২০২২ সাল থেকে থার্মোকল এবং প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, কিন্তু উৎপাদনের উপর কোনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তিনি বলেন, “প্রতি বছর পুলিশ পরিদর্শনে আসে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত এই ধরনের উপকরণ ব্যবহারের উপর কঠোরভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এবার হঠাৎ করেই এই নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগের চাপ মূর্তিকারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।” তিনি আরও জানান, থার্মোকল মূর্তি সাজানোর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপকরণ। এটি গহনা, পটভূমি এবং এমনকি চালের মতো বিভিন্ন সাজসজ্জার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিকল্প হিসেবে কার্ডবোর্ড বা ধাতব উপকরণ ব্যবহার করলে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে, যা মূর্তিকারদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

মূর্তিকার ইন্দ্রজিৎ পাল জানিয়েছেন, এই বছর মূর্তি তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই সময়ে হঠাৎ করে উপকরণ পরিবর্তন করা ব্যবহারিকভাবে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “যদি এখন থেকে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়, তাহলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী উপকরণ যেমন কাঠ, বাঁশ বা মাটির উপর নির্ভর করতে হবে।

কিন্তু এতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে এবং সময়ও বেশি লাগবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাজকে আরও জটিল করে তুলছে।”

পশ্চিমবঙ্গ প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড জানিয়েছে, থার্মোকল পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর জারি করা একটি আদেশে শুধুমাত্র মূর্তি সাজানোই নয়, বিয়ের সাজসজ্জার মতো ক্ষেত্রেও থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বোর্ডের মতে, থার্মোকল দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি করে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

তবে, পুলিশ এবং বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, জব্দকরণ নয়। তারা মূর্তিকারদের আশ্বাস দিয়েছেন যে গুরুতর লঙ্ঘন না হলে কিছুটা সহনশীলতা দেখানো হবে।

Advertisements

পরিবেশবাদীদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে কার্যকর করা উচিত, তবে জনসচেতনতা প্রচার খুব দেরিতে শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজার জন্য মূর্তি তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই সময়ে উপকরণ পরিবর্তনের চাপ মূর্তিকারদের জন্য অব্যবহারিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা বলছেন, পরিবেশবান্ধব উপকরণ যেমন শুকনো ফুল, প্রাকৃতিক আঠা বা বাঁশ ব্যবহার করা সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং অর্থনৈতিক সহায়তা এই মুহূর্তে উপলব্ধ নয়।

এক্স প্ল্যাটফর্মে এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ পেয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা হঠাৎ আরোপ করা হয়েছে এবং এটি মূর্তিকারদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ এটিকে পরিবেশ রক্ষার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও, তারা মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য মূর্তিকারদের বিকল্প উপকরণ এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা দেওয়া উচিত।

কেন্দ্রীয় প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) ২০২০ সালে মূর্তি বিসর্জনের জন্য নির্দেশিকা সংশোধন করে থার্মোকল, প্লাস্টিক এবং প্লাস্টার অফ প্যারিসের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি মূর্তির বিসর্জন নিষিদ্ধ করেছিল। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি মূর্তি, যা প্রাকৃতিকভাবে পচনশীল, তা বিসর্জনের জন্য অনুমোদিত হবে। পশ্চিমবঙ্গে এই নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য রাজ্য প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড তৎপরতা দেখাচ্ছে।

কুমোরটুলির মূর্তিকাররা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশার উপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল এই নিষেধাজ্ঞার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প সমাধান প্রদান করা।

Dev-Shubhashree: দেব-শুভশ্রীর ‘ধূমকেতু’তে নায়িকাবদল, কার জায়গায় এলেন শুভশ্রী

দুর্গাপূজা, যা বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব, তার ঠিক আগে এই নিষেধাজ্ঞা তাদের কাজের গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকার এবং মূর্তিকারদের মধ্যে একটি সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন, যাতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মূর্তিকারদের জীবিকাও সুরক্ষিত থাকে।