কলকাতা: টানা বর্ষণে জলের তলায় চলে গেল শহর কলকাতা (Kolkata Rainfall) ও তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ শহরতলি এলাকা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত শুক্রবার সকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে চলায় কলকাতা এবং হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু অঞ্চলে দেখা দিয়েছে জল জমার মারাত্মক সমস্যা।
যাত্রীরা কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি, স্কুল-অফিস কার্যত অচল, নিম্ন এলাকা জলমগ্ন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বহু জায়গায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বহু এলাকায় ঘরের ভেতরেও জল ঢুকে পড়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর এবং বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনের তথ্যে জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ কলকাতা এবং শহরতলির কিছু কিছু অংশে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
এলাকাভিত্তিক বৃষ্টির পরিমাণ (গত ২৪ ঘণ্টা):
আলিপুর 96 mm
গড়িয়া 110 mm
বেহালা 115 mm
টালিগঞ্জ 108 mm
কসবা 104 mm
শ্যামবাজার 87 mm
মানিকতলা 91 mm
ধর্মতলা/এসপ্ল্যানেড 85 mm
শহরতলি ও সংলগ্ন জেলা
হাওড়া 102 mm
সল্টলেক 98 mm
ডানকুনি 94 mm
বজবজ 97 mm
সোনারপুর 111 mm
বারুইপুর 108 mm
নিউটাউন 89 mm
মধ্যমগ্রাম 86 mm
এই তালিকা থেকে স্পষ্ট, শহরের দক্ষিণ অংশ এবং শহরতলির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বিশেষত সোনারপুর, বারুইপুর, বেহালা, গড়িয়া ও টালিগঞ্জের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।
দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস:
শনিবার (শনিবার, ২৬ জুলাই):
পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
দমকা হাওয়া ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকবে।
রবিবার (রবিবার, ২৭ জুলাই):
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে কিছু এলাকায়।
বাড়ির ভিতরে জল, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক এলাকায়
বেহালা, কাশীপুর, টালিগঞ্জ অঞ্চলের একাধিক এলাকায় বাড়ির নিচতলায় ঢুকে গিয়েছে জল। পাম্প দিয়ে জল বের করার চেষ্টা করা হলেও বৃষ্টির তোড়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অনেক বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে দুর্ঘটনা এড়াতে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের মধ্যে।
জল জমে কোথায় কতটা দুর্ভোগ?
বেহালা, গড়িয়া, কসবা, টালিগঞ্জ, শ্যামবাজার, মানিকতলা— এসব এলাকায় বহু জায়গায় হাঁটুজল জমে গেছে। রাস্তার পাশের দোকান বা নিচু বাড়িগুলির ভিতরে জল ঢুকে পড়েছে।
শহরতলির মধ্যে সোনারপুর, বজবজ ও হাওড়ার বেশ কিছু অংশে বাসিন্দারা গৃহবন্দি।
নিউটাউনে জল জমেছে প্রধান সড়কে, ফলে অফিস টাইমে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সল্টলেকে সেক্টর V এলাকায় আইটি কর্মীদের কাজের সমস্যা হয়েছে। অনেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোমে ফিরে গিয়েছেন। হাওড়ায় স্টেশন সংলগ্ন এলাকা ও আন্দুল রোড এলাকায় প্রবল জল জমার সমস্যা দেখা দেয়।
কলকাতা পুরসভার পাশাপাশি হাওড়া পুরনিগম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ এবং নিউটাউন অথরিটি জল নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছে। প্রায় ৩০০টির বেশি পাম্প চালু করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন,“আমরা সমস্ত পাম্প চালিয়ে জল সরানোর কাজ করছি। শহরের নিম্নচাপ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।”
প্রশাসনের ভূমিকা ও পদক্ষেপ
কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই সমস্ত ওয়ার্ড অফিসে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি দল মোতায়েন করা হয়েছে। ম্যানহোল খোলা হচ্ছে, পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা চলছে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এই প্রচেষ্টা অনেক সময়েই অপ্রতুল প্রমাণিত হচ্ছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
প্রতি বর্ষায় কলকাতা এবং আশেপাশের শহরতলির জল জমা এক নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন যতই জল অপসারণের চেষ্টা করুক, একটানা ভারী বর্ষণ এবং পুরনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা মিলিয়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।