রবীন্দ্র সরোবরের দ্বীপ পুনরুদ্ধারে কেএমডিএর বিশেষ পরিকল্পনা

রবীন্দ্র সরোবর এখন একাধিক সমস্যার সম্মুখীন। এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সরোবরের ভিতরে অবস্থিত দ্বীপটির অবস্থা, যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপটির…

Rabindra Sarovar

রবীন্দ্র সরোবর এখন একাধিক সমস্যার সম্মুখীন। এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সরোবরের ভিতরে অবস্থিত দ্বীপটির অবস্থা, যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপটির পরিবেশগত অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে যাওয়ায় কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যাতে দ্বীপটি পুনরুদ্ধার এবং সরোবরের সৌন্দর্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে যাওয়ার পথে এক অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় – জলমগ্ন দ্বীপটি। কিন্তু বর্তমানে ওই দ্বীপটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্রচুর গাছ মরে পড়ে রয়েছে এবং শুকিয়ে গিয়ে দ্বীপটির সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়া আগাছার জঙ্গল, ঝোপঝাড় এবং বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট কাদা জমে অশোভন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো এখানে বিষাক্ত সাপের উপস্থিতি, যা দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি।

   

দ্বীপটির পুনঃরুদ্ধারের জন্য কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হলো দ্বীপটির পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। প্রথমেই ওই দ্বীপে মৃত গাছগুলি অপসারণ করা হবে, যাতে নতুন গাছপালা জন্মাতে পারে।

Advertisements

কেএমডিএ দ্বীপটিতে “সিড বল” ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। সিড বল হল এমন গোলাকার বস্তু, যা মাটি, বীজ এবং সার মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই বলগুলো দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে গাছের বীজগুলি সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। সিড বল থেকে নতুন গাছ জন্মাবে, যা দ্বীপটির সবুজায়ন এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। এটি এক ধরনের নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি, কারণ দ্বীপটির অবস্থা এমন যে, সেখানে সরাসরি গাছ লাগানো সম্ভব নয়।

দ্বীপটির আরও একটি বড় সমস্যা হলো পাখিদের বিষ্ঠা। রবীন্দ্র সরোবরের দ্বীপে প্রচুর পাখি আসে, যার কারণে তাদের বিষ্ঠার জন্য বেশ কিছু গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া দ্বীপের আশপাশের এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। অনেক সময় সাপের কামড়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে, তাই এই ধরনের প্রাণী নিয়ন্ত্রণের জন্যও কেএমডিএ নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

দ্বীপটির পুনর্নির্মাণ ছাড়াও, কেএমডিএ পুরো রবীন্দ্র সরোবর এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে। সরোবরের সীমানায় রাস্তা, বসার জায়গা এবং অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বেশ কিছু রাস্তা এবং আসন ভেঙে পড়েছে, যা সংস্কার করা জরুরি। এই সংস্কারগুলি রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশকে আরও সুন্দর এবং অতিথিপরায়ণ করে তুলবে।

কেএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং সরোবরের পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন সরোবরের জীববৈচিত্র্য বাড়ানোর পাশাপাশি, এটি কলকাতার মানুষদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

কেএমডিএ সুত্রে খবর, এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপে আরও কিছু পরিবর্তন হবে, যাতে রবীন্দ্র সরোবরকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করা যায়। একদিকে যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ হচ্ছে, অন্যদিকে পর্যটকদের আকর্ষণও বাড়ানো হবে।