কলকাতায় সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ নিয়ে কেএমসি ও পিসিবির বাকযুদ্ধ

কলকাতার বাজারগুলোতে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। যা গত জুলাই ২০২২ থেকে নিষিদ্ধ। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পরও এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি…

Single plastic ban in Kolkata

কলকাতার বাজারগুলোতে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। যা গত জুলাই ২০২২ থেকে নিষিদ্ধ। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পরও এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। একদিকে কলকাতা পুরসভার (KMC) পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে অক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (পিসিবি) তাদের দায় অস্বীকার করছে।

গত শনিবার কেএমসি মেয়র ফিরহাদ হাকিম এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান কেএমসি সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক সরবরাহ বন্ধ করার জন্য এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা রাখে না। তাই এই দায় তাদের নয়, বরং তিনি পিসিবি ও পুলিশকেই দায়ী করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘বুরবাজার ও বাগরি মার্কেটের মতো স্থান থেকে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিকের সরবরাহ হচ্ছে, এবং পিসিবি ও পুলিশকেই সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।’’

   

তবে পিসিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পিসিবি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাদের কাজ বাজারে অভিযান চালানো নয়। তিনি বলেন ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী এই দায়িত্ব কেবল কেএমসি’র। পিসিবি বাজারে গিয়ে সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিকের বিক্রি বন্ধ করতে পারে না।’’

Advertisements

পিসিবির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তারা কেএমসি’কে চিঠি পাঠিয়েছে যাতে কেএমসি, পিসিবি ও কলকাতা পুলিশ একত্রে অভিযান চালিয়ে এই প্লাস্টিক বিক্রি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আরও জানিয়েছেন, ‘‘আমি পিসিবির কাছে বিষয়টি বেশ কয়েকবার উত্থাপন করেছি। আশা করছি, তারা পুলিশকে নিয়ে অভিযানে নামবে। এছাড়া, সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নেপাল এবং ভুটান থেকেও আসছে।’’

২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখানে জানানো হয়েছিল, ‘‘রাজ্যগুলির নগর উন্নয়ন দপ্তর, যাদের অধীনে পৌরসভাগুলি কাজ করে, তাদের সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’’

সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিকের সমস্যার গুরুতরতা এখন বিশ্বব্যাপী। এই প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়া করা যায় না এবং পরিবেশে অনেক বছর ধরে রয়ে যায়। সময়ের সাথে এটি মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২২ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা বায়ু, জল, মাটি, খাদ্য ও পানীয়তে পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরে এর প্রবাহের পরিচায়ক।’’

এই পরিস্থিতিতে কেএমসি এবং পিসিবির এই বাকযুদ্ধ এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা একদিকে যেমন সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে বাধা সৃষ্টি করছে। তেমনি কলকাতার পরিবেশগত ভারসাম্যকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিলে কেবল পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে, বরং শহরের পরিচ্ছন্নতা এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।