স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা: খিদিরপুরে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড (Khidirpur fire news) রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে খিদিরপুরের একটি বাণিজ্যিক এলাকার ঘিঞ্জি গলিতে হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বহু ব্যবসায়ী।
এই ঘটনার জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে অভিযোগ করেছেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মারাত্মক ঘাটতি এবং প্রশাসনের ঢিলেমির কারণেই আগুন এত বড় আকার নিয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগুনকে ‘ম্যান মেড’ বা ‘মানুষ দ্বারা পরিকল্পিত’ বলে অভিহিত করেন। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়। এটা একেবারে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। গোটা ঘটনা তদন্ত হওয়া দরকার। রাজ্যে এখন গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়েও রাজনীতি করছেন শুভেন্দু অধিকারী। তদন্ত না জেনেই এমন মন্তব্য করা একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন। আমরা চাই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশের কথাতেও উঠে এসেছে সন্দেহের সুর। তাঁরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় কোনও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা রান্নার গ্যাস বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি দেখা যায়নি। ফলে অনেকেই একে ‘চক্রান্তমূলক’ ঘটনা বলে মনে করছেন।
ফায়ার ব্রিগেড সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ৭টি ইঞ্জিন দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় কেউ প্রাণ হারাননি বলেই আপাতত মনে করা হচ্ছে, তবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট বক্তব্য সামনে আসেনি। তবে প্রশাসনের একাংশ জানিয়েছে, ফরেনসিক টিমকে তদন্তে ডাকা হয়েছে এবং আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
শুভেন্দু অধিকারীর আরও দাবি, “এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজ্যের জনগণ আজ অসহায়। অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনায়ও তারা নিরাপদ নয়।”
প্রসঙ্গত, খিদিরপুরের মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেকোনও সময় বড় অগ্নিকাণ্ড মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই প্রশাসনের দায়িত্ব আরও বাড়ে এই অঞ্চলে আগুন নিবারণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
এই ঘটনার তদন্ত কী ফল দেয় এবং আদৌ কোনো ষড়যন্ত্রের ছাপ মেলে কি না, সেদিকেই নজর রাখছে রাজ্যবাসী।