আদালতের নির্দেশে খুলছে কসবা ল কলেজ, বন্ধ থাকবে ইউনিয়ন রুম

কলকাতা: রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ানো কসবা ল কলেজ (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডের পর অবশেষে খোলার সিদ্ধান্ত হল কলেজের। দীর্ঘ অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা এবং তদন্তের আবহের মধ্যেই…

আদালতের নির্দেশে খুলছে কসবা ল কলেজ, বন্ধ থাকবে ইউনিয়ন রুম

কলকাতা: রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ানো কসবা ল কলেজ (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডের পর অবশেষে খোলার সিদ্ধান্ত হল কলেজের। দীর্ঘ অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা এবং তদন্তের আবহের মধ্যেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে আগামী সোমবার থেকে পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে সাউথ কলকাতা ল কলেজে। যদিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে ছাত্র ইউনিয়নের ঘর, যেখানেই ঘটেছে নির্যাতনের সেই নক্কারজনক ঘটনা।

ঘটনার পর কলেজ (Kasba Law College) কর্তৃপক্ষ একদিনের জন্য ক্লাস বন্ধ রাখে। পুলিশ তদন্ত চালানোর স্বার্থে কলেজ ক্যাম্পাসকে সিল করে দেয়। সেই সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চশিক্ষা দফতরকে একটি চিঠি দিয়ে জানায়, “পুলিশের তদন্ত চলার জন্যই আপাতত কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

   

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন কলেজ বন্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে। তবে আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—শুধুমাত্র ইউনিয়ন রুম বন্ধ রেখে কলেজ পুনরায় খোলা হবে।

কসবা কাণ্ডের তদন্তে প্রথমবার ব্যবহৃত হচ্ছে থ্রি-ডি স্ক্যানার ও ম্যাপিং প্রযুক্তি। গোটা কলেজ (Kasba Law College) বিল্ডিং এবং বিশেষত ঘটনাস্থল—ইউনিয়ন রুম ও গার্ড রুমের থ্রি ডাইমেনশনাল ছবি তুলে একটি ক্রাইম সিন রিকনস্ট্রাকশন মডেল তৈরি করা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে তিন অভিযুক্ত এবং এক নিরাপত্তারক্ষীকে কলেজে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্তকারীরা প্রতিটি মুহূর্ত খুঁটিয়ে দেখছেন—কে কোথায় ছিল, কোন সময়ে কী ঘটেছে, নির্যাতিতার সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছিল।

এই পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে, তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন—

ঠিক কীভাবে ও কোথায় ঘটনা ঘটেছিল?

কারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল?

Advertisements

আদৌ এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ষড়যন্ত্র ছিল কি না?

এই ঘটনাটি শুধু একটি কলেজের (Kasba Law College) পরিসীমায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজ্যজুড়ে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কলেজে নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা, ছাত্র ইউনিয়নের দায়বদ্ধতা, এবং প্রশাসনের নজরদারি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

পাশাপাশি ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে—পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এবং আগামী দিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হবে।

কলেজ খুলছে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশ এখনও স্বাভাবিক নয়। বিচারবিভাগীয় নির্দেশে পঠনপাঠন চালু হলেও, প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে তুঙ্গে। কড়া পুলিশি পাহারা থাকবে ক্যাম্পাসে।

ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে এবং শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্র ইউনিয়নের ঘর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তই আপাতত বাস্তবিক এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও উঠে এল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক নজরদারি ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রশ্ন।
তবে কসবা ল কলেজ পুনরায় খুলছে—এটাই আপাতত স্বস্তির খবর, যদিও সাময়িক।

সতর্কতার পাশাপাশি প্রয়োজন বিচার ও সচেতনতা। এই নৃশংস ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে—সেইটাই হোক রাজ্যবাসীর একমাত্র কামনা।