নতুন ছাত্রী দেখলেই টার্গেট, অস্ত্র মামলাতেও অভিযুক্ত মনোজিৎ

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবা ল কলেজের (Kasba Law College) ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের বিরুদ্ধে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু…

নতুন ছাত্রী দেখলেই টার্গেট, অস্ত্র মামলাতেও অভিযুক্ত মনোজিৎ

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবা ল কলেজের (Kasba Law College) ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের বিরুদ্ধে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু এই ঘটনা নয়, কলেজে ভর্তি হওয়ার অনেক আগেই অপরাধের জগতে তার প্রবেশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, মনোজিৎ স্কুলজীবন থেকেই মদ ও গাঁজার প্রতি আকৃষ্ট ছিল। “ক্লাস সেভেন থেকে নেশার প্রতি ঝোঁক,” বলছেন এক প্রতিবেশী।

   

কলেজে ‘শিকার’ খোঁজা ছিল নিত্যদিনের কাজ
প্রতিবেশী ও সহপাঠীদের অভিযোগ, কলেজে (Kasba Law College) প্রথম বর্ষের নতুন ছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার পরই তাদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের’ ছল করে মনোজিৎ কু-নজর দিত। শারীরিকভাবে স্পর্শ করা, হেনস্তা করা তার রোজকার ব্যাপার ছিল। ভয়ে কেউই প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে সাহস পেতেন না।

অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভ্যাস
স্কুল ছাড়ার পর থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ‘মস্তানি’ করত মনোজিৎ। প্রায়শই কোমরে বেআইনি অস্ত্র রাখত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “চেতলা ব্রিজের কাছে এক ব্যক্তিকে খুনের চেষ্টাও করেছিল সে।” ২০১৪ সালে আলিপুরের রাখালদাস আঢ্যি রোড এলাকায় এক ব্যক্তিকে ছুরি দিয়ে খুনের চেষ্টা করে মনোজিৎ। এমনকি আইন কলেজে ভর্তি হলেও মামলার ভয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দেয় সে।

টানা চার বছর পড়াশোনা বন্ধ
আপাতত জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে কলেজে ভর্তি হলেও চার বছরের জন্য পড়াশোনা বন্ধ রাখতে হয় মনোজিতকে। ২০১৮ সালে আবারও সেই একই কলেজে ভর্তি হয়। এই সময় বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র দেখিয়ে যুবকদের ভয় দেখানোর একাধিক অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

যৌন হেনস্তা থেকে তোলাবাজি সবই ছিল রুটিন
প্রতিদিনের নেশা করার পর এলাকায় যুবতীদের হেনস্তা, তোলাবাজি করা ছিল তার নিত্যদিনের ঘটনা প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মনোজিৎ এবং তার সঙ্গীরা “হকি স্টিক আর রড নিয়ে চড়াও হত।” এমনকি, আলিপুর কোর্টে এক মহিলা আইনজীবীকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

Advertisements

পরিবারের ভূমিকা ও রাজনৈতিক যোগ
মনোজিতের বাবা রবীন মিশ্র, কালীঘাট অঞ্চলের প্রাক্তন সিপিএম নেতা এবং এলাকার এক দুধ-পণ্য দোকানের মালিক।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাবার মদতেই ছেলের দাপট বেড়ে গিয়েছিল। তবে রবীন মিশ্র সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমার ছেলে যদি দোষী হয়, সে যেন শাস্তি পায়। আমার ছেলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।”

বাকিদের পরিবারও হতবাক ধৃত জায়েব আহমেদের কাকা জানান, “ঘটনার রাতে বাড়ি ফিরে জায়েব কিছুই জানাননি। তবে অপরাধ চুপ করে দেখা নিজেও অপরাধের মধ্যে পড়ে।”

অন্য অভিযুক্ত প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের পরিবারও হতবাক। তাঁরা এলাকার “সম্ভ্রান্ত পরিবার” হিসেবে পরিচিত। তাঁদের ছেলে কীভাবে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল, তা তাঁরা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না।

সব মিলিয়ে কসবাকাণ্ডে মনোজিৎ মিশ্রের বিরুদ্ধে পুরোনো অপরাধের ইতিহাস এবং চলমান তদন্ত দুটোই সামনে আসছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী আরও নতুন তথ্য সামনে আসতে পারে।