কসবা কলেজে ছাত্র সংগঠনের নেত্রী করার টোপ, প্রত্যাখ্যানের শাস্তি ধর্ষণ!

কলকাতা: কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। জানা যাচ্ছে, আইন কলেজের ইউনিয়নে নেত্রী করার…

Woman gang-raped in ambulance

কলকাতা: কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। জানা যাচ্ছে, আইন কলেজের ইউনিয়নে নেত্রী করার লোভ দেখিয়ে প্রথম বর্ষের এক তরুণীকে ডাকা হয়েছিল কলেজে। তারপর একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা।

সূত্রের খবর, গত ২৫ জুন বেলা ১২টা ৫ মিনিট নাগাদ ওই তরুণী কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাসে পৌঁছান। সেখানে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ ঘোষ তাঁকে বলেন, “আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। প্রথম দিন থেকেই তোমাকে ভাল লেগেছে।”

   

তবে তরুণী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর ইতিমধ্যেই একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। পাল্টা মনোজিৎ জানায়, তারও গার্লফ্রেন্ড আছে, কিন্তু সে তাকে ছেড়ে দিতে রাজি। একইসঙ্গে তরুণীকে তাঁর প্রেমিককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। মেয়েটি রাজি না হওয়াতেই শুরু হয় নৃশংস পরিকল্পনা।

তরুণীর প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়। সে হাসপাতালে যেতে চায়। কিন্তু অভিযুক্ত তাতে বাধা দেয়। এরপর সন্ধ্যাবেলা, কলেজের ইউনিয়ন রুমের বাইরে প্রথম পর্যায়ে ছাত্রীটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর আকার নেয়।

মনোজিৎ ও তার দুই সঙ্গী কলেজের গার্ড রুমে নিয়ে যায় তরুণীকে। অভিযোগ, সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্তরা আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে কলেজের গার্ডকে ভয় দেখিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়। গার্ড রুমের ভিতরে নির্জনে চলে পাশবিক অত্যাচার। বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয় বাকি দুই অভিযুক্ত।

এইসময় কলেজের মূল গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে নির্যাতিতা কোনোভাবেই পালাতে না পারে। নির্যাতিতা জানান, ধর্ষণের সময় তিনি বারবার অভিযুক্তদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন, কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি।

Advertisements

শুধু ধর্ষণই নয়, ধর্ষণের পর নির্যাতিতার উপর চলে শারীরিক নিগ্রহ। অভিযোগ, তাকে হকি স্টিক দিয়ে মারা হয়। আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হল, ধর্ষণের মূহুর্ত ভিডিও করে রাখে মূল অভিযুক্ত।

ধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে হুমকি দেওয়া হয়, যেন এই ঘটনার কথা কাউকে না জানায়। না হলে তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে। এমনকি, তার প্রেমিককেও খুন করানোর হুমকি দেয় অভিযুক্ত। ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হয়।

পুলিশের হাতে নির্যাতিতার বয়ান পৌঁছানোর পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা কলেজ মহলে। ইতিমধ্যেই পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। চলছে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ।

বিশেষ তদন্তকারী দল জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং কলেজ ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধর্ষণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, শারীরিক নির্যাতন, ডিজিটাল ব্ল্যাকমেল এবং হুমকির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

শিক্ষা মহলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন বহু মানুষ। কলেজ প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। এখন সকলের নজর তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দিকেই।