কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে (Kasba Law College) গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার তদন্তের ফোকাসে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ। সূত্রের খবর, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার অ্যাকসেস ছিল মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্রের মোবাইল ফোনেও।
কলেজের (Kasba Law College) প্রবেশপথে এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। এই ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ নজরদারির জন্য রয়েছে মনিটর, যা কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে স্থাপিত। অথচ চাঞ্চল্যকর তথ্য, উপাধ্যক্ষ ছাড়াও সেই ক্যামেরার লাইভ ফিড এবং রেকর্ড করা ফুটেজ মনোজিৎ নিজের মোবাইলেও দেখতে পারতেন!
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, বুধবারের ঘটনায় অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই সমস্ত কিছু সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট থাকার কথা। কিন্তু এখানেই উঠছে বড় প্রশ্ন— ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মনোজিৎ কি ওই ফুটেজে ট্যাম্পারিং করেছেন?
কলেজের (Kasba Law College) পড়ুয়া এবং কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, মনোজিৎ প্রায়ই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিজের মোবাইলে ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতেন। যা থেকেই বোঝা যায়, কলেজের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণেও ছিল তাঁর বড়সড় ভূমিকা।
শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েও সিসিটিভি বিষয়ক প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়। ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।
এদিকে কলেজের বিভিন্ন স্থায়ী এবং অস্থায়ী শিক্ষকরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, কলেজ পরিচালন সমিতির গাফিলতির জন্যই মনোজিৎ এতদিন ধরে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন।
এক শিক্ষক বলেন, “মনোজিৎ ছাত্রাবস্থাতেও ক্যাম্পাসে গুণ্ডামি করত। প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। অথচ সাত-আট মাস আগে তাঁকেই কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে পড়ুয়ারা কলেজ ছাড়েন। এরপরও কেউ ক্যাম্পাসে থাকলে তার নাম, সময় রেজিস্টারে লিখতে হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা এই নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা— ইউনিয়ন রুম ও গার্ড রুম সিল করেছে পুলিশ। শুক্রবার কলেজে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
তদন্তকারীরা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা যাচাইয়ে। ক্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রীর যাতায়াত, অভিযুক্তদের গতিবিধি, নিরাপত্তার গাফিলতি— সবকিছুর প্রমাণ রয়েছে ওই ফুটেজেই। যদি সেখানে ট্যাম্পারিং হয়ে থাকে, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও বড় আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মনোজিৎ এবং তাঁর সহযোগীদের মোবাইল ফোনও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
কলেজের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ঘটনা আমাদের কলেজের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমরা চাই দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পাক।” পুরো ঘটনাটি বর্তমানে রাজ্য জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়েছে প্রবল আতঙ্ক এবং ক্ষোভ।