রাজ্য পুলিশে আস্থা রেখে CBI তদন্তে না-রাজ নির্যাতিতার আত্মীয়

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবার আইন কলেজে (Kasba Law College) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে গোটা রাজ্য জুড়ে চলছে চাঞ্চল্য। একদিকে যখন…

রাজ্য পুলিশে আস্থা রেখে CBI তদন্তে না-রাজ নির্যাতিতার আত্মীয়

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবার আইন কলেজে (Kasba Law College) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে গোটা রাজ্য জুড়ে চলছে চাঞ্চল্য। একদিকে যখন রাজনৈতিক মহলে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে, অন্যদিকে নির্যাতিতার পরিবার জানিয়ে দিলেন— তাঁরা কলকাতা পুলিশের তদন্তেই সম্পূর্ণ আস্থা রাখছেন।

রবিবার নির্যাতিতার মামা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘আমরা সিবিআই চাই না। কলকাতা পুলিশের তদন্তেই আমরা সন্তুষ্ট।’’

   

পরিবারের বক্তব্য: নিরাপত্তাহীনতা নেই, সঠিক পথে চলছে তদন্ত

নির্যাতিতার মামা জানান, “আমরা কোনও রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আমরা পুলিশকে সমস্ত সহযোগিতা করছি।” তিনি আরও বলেন, ‘‘জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) থেকেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা আমাদের বক্তব্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছি।’’

নির্যাতিতা এখন কলকাতাতেই থাকবেন
পুলিশি তদন্তের স্বার্থেই নির্যাতিতাকে আপাতত কলকাতায়ই রাখা হচ্ছে বলে জানান তাঁর মামা। তিনি বলেন, “আমরা নির্যাতিতাকে বাড়িতে আনছি না। সে কলকাতাতেই থাকবে। পুলিশ যেভাবে বলছে, আমরা সেইভাবেই সহযোগিতা করছি।”

সিবিআই না চাওয়ার পেছনে যুক্তি
পরিবারের এই অবস্থানের পাশাপাশি শনিবার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল-ও সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে, “সিবিআই অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু দেরিতে কেস দিলে অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা চাই, এই মামলার তদন্ত কলকাতা পুলিশই করুক। কারণ তারা এখনই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘সিবিআইকে যদি পাঁচ-দশ দিন পর কেস দেওয়া হয়, ততদিনে সব তথ্য ট্যাম্পার হয়ে যাবে। প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা তো বোকা নই। তাই এই তদন্ত এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশের হাতেই থাকা উচিত।’’

Advertisements

রাজনৈতিক চাপানউতোর
তবে অগ্নিমিত্রা পালের এই বক্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। একদিকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির একাংশ যেখানে সিবিআই তদন্তের দাবি করছে, সেখানে দলেরই এক বিধায়ক এই ঘটনার তদন্ত রাজ্য পুলিশের হাতেই রাখার কথা বলছেন।

এই নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধও সামনে এসেছে। অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “এটা আমার ব্যক্তিগত মত। বিজেপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।”

পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি
এদিকে, পুলিশ ইতিমধ্যেই মূল তিন অভিযুক্ত এবং নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তে গতি আনতে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ, ডিএনএ নমুনা এবং ফরেনসিক প্রমাণ। আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রী। পাশাপাশি এবার তাঁর মা-বাবার গোপন জবানবন্দি নিতেও আদালতের কাছে আবেদন করেছে পুলিশ।

প্রশাসনিক তৎপরতা
কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন একযোগে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “এই ধরনের ঘটনা রুখতে নিরাপত্তা পরিকাঠামো বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

সব মিলিয়ে কসবাকাণ্ডে তদন্তের গতি এবং প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে আপাতত সন্তুষ্ট নির্যাতিতার পরিবার। তারা এখন একটাই চান— ন্যায়বিচার।