কলকাতা: কসবার সরকারি কলেজে (Kasba Law College) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে নতুন করে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে, নির্যাতিতার উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের প্রমাণ। জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার গলায় রয়েছে কামড়ের দাগ, শরীরের একাধিক স্থানে রয়েছে মারধরের চিহ্ন। শুধু তাই নয়, যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রভাবশালী নেতা তথা কলেজের (Kasba Law College) অস্থায়ী কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তের দুই সঙ্গীও এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার বয়ান এবং মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকদের বক্তব্য, নির্যাতিতা যখন হাসপাতালে পৌঁছান, তখন তাঁর গলায় স্পষ্ট কামড়ের দাগ ছিল। শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়, তাঁর যৌনাঙ্গে গুরুতর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। যা নিশ্চিত করছে যে তাঁকে বলপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে।
মেডিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি, নির্যাতিতার দেওয়া বিবরণও ঘটনায় ভয়াবহতার মাত্রা স্পষ্ট করেছে। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, গত ২৫ জুন রাত সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১১টার মধ্যে কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাসের ভিতরে তাঁর উপর এই পাশবিক অত্যাচার চলে। প্রথমে তাঁকে ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক অভিযুক্ত। এরপর তাঁর প্যানিক অ্যাটাক হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বহুবার অনুরোধ সত্ত্বেও অভিযুক্তরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।
পরবর্তীতে তাঁকে একটি ইনহেলার দেওয়া হয় সাময়িক স্বস্তির জন্য। কিন্তু যখন ওই ছাত্রী কলেজ (Kasba Law College) থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন, তখন তাঁকে জোর করে গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মূল ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বাকি দুই অভিযুক্ত। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ভিডিওও রেকর্ড করা হয় বলে অভিযোগ। পরবর্তীতে ওই ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার পরিকল্পনা ছিল অভিযুক্তদের।
পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার বয়ান নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গণধর্ষণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, শারীরিক নির্যাতন ও ডিজিটাল ব্ল্যাকমেলের ধারাও। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আরও তদন্তের স্বার্থে কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসন ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি, কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উঠছে বড় প্রশ্ন। ছাত্রদের একাংশও অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন।
এই ঘটনা ফের একবার শহর কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল।